অগ্নি (ক্ষেপণাস্ত্র)Agni mescil details
অগ্নি (ক্ষেপণাস্ত্র)
এই নিবন্ধটি ভারতের একটি ক্ষেপনাস্ত্র সিরিজ সম্পর্কে। একই নামের অন্যান্য নিবন্ধের জন্য, অগ্নি (দ্ব্যর্থতা নিরসন) দেখুন।
অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র হল ভারতে সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি অধীনে নির্মিত মাঝারি থেকে আন্তর্মহাদেশীয় পাল্লার ব্যালিস্টিক মিশাইলের একটি বর্গ। ২০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী, অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র বর্গের অন্তর্গত ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হলঃ
অগ্নি-১ মিডিয়াম-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ৭০০ – ১,২০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।
অগ্নি-২ ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ২,০০০- ২,৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।
অগ্নি-৩ ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ৩,০০০ - ৫,৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।
অগ্নি-৪ ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ৩,২০০- ৩,৭০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।[১২][১৩]
অগ্নি-৫ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিশাইল, ৫,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জ[১৪][১৫]।
অগ্নি-৬ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিশাইল, ১০,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জ[১৬] (নির্মাণাধীন)।
অগ্নি (ক্ষেপণাস্ত্র)
অগ্নি-২ এমআরবিএম (ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল)
প্রকার
মিডিয়াম-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল(অগ্নি-১)
ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল (অগ্নি-২, অগ্নি-৩, অগ্নি-৪)
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিশাইল (অগ্নি-৫)
উদ্ভাবনকারী
ভারত
ব্যবহার ইতিহাস
ব্যবহারকাল
(পরীক্ষা) ০৪/১১/৯৯, ০১/১৭/০১ ও ০৮/২৯/০৪
উৎপাদন ইতিহাস
উৎপাদনকারী
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠন (ডিআরডিও), ভারত ডায়নামিকস লিমিটেড (বিডিএল)
উৎপাদন
খরচ (প্রতিটি)
২৫-৩৫ কোটি টাকা[১]
তথ্যাবলি
ওজন
১২,০০০ কিলোগ্রাম(অগ্নি-১)[২]
১৬,০০০ কিলোগ্রাম (অগ্নি-২)
৪৮,০০০ কিলোগ্রাম (অগ্নি-৩)[৩]
৪৯,০০০ কিলোগ্রাম (অগ্নি-৫)[৩]
দৈর্ঘ্য
১৫ মি (অগ্নি-১)[২]
২১ মি (অগ্নি-২)[৪]
১৭ মি (অগ্নি-৩)[৫]
১৭.৫ মি (অগ্নি-৫)[৩]
ব্যাস
১.০ মি (অগ্নি-১, অগ্নি-২)
২.০ মি (অগ্নি-৩)
Warhead
স্ট্রাটেজিক নিউক্লিয়ার (১৫ কেটি থেকে ২৫০ কেটি), কনভেনশনাল এইচই-ইউনিটারি, পেনেট্রেশন, সাব-মিউনিশনস, ইনসেন্ডিয়ারি অথবা ফুয়েল এয়ার এক্সপ্লোসিভস
ইঞ্জিন
সিঙ্গল স্টেজ (অগ্নি-১)
টু-অ্যান্ড-আ-হাফ স্টেজ (অগ্নি-২)
টু স্টেজ (অগ্নি-৩) সলিড প্রোপেলান্ট ইঞ্জিন
অপারেশনাল
রেঞ্জ
৭০০-১,২০০ কিলোমিটার (অগ্নি-১)[২][৭]
২,০০০-৩,৫০০ কিলোমিটার (অগ্নি-২)[৪]
৩,৫০০-৫,৫০০ কিলোমিটার (অগ্নি-৩)
৫,০০০ কিলোমিটার (অগ্নি-৫)
ফ্লাইট উচ্চতা
৩০০ কিলোমিটার (অগ্নি-১)[৮]
২৩০ কিলোমিটার (অগ্নি-২),[৪][৯]
৩৫০ কিলোমিটার (অগ্নি-৩)[১০]
গতিবেগ
২.৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড (অগ্নি-১)[৩]
৩.৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড (অগ্নি-২)[৪][৬]
নির্দেশনা
পদ্ধতি
রিং লেসার গাউরো-আইএসএস (ইনার্টিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম), ক্ষেত্রবিশেষে পসিবল র্যাডার সিন কোরিলেশন সহ জিপিএস টার্মিনাল গাইডেন্স কর্তৃক বর্ধিত
লঞ্চ
প্লাটফর্ম
৮ x ৮ টাট্রা টিইএলএআর (ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার) রেল মোবাইল লঞ্চার. অগ্নি-১ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-১
২০০২ সালের ২৫ জানুয়ারি চাঁদিপুরে অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথম ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জে পরীক্ষিত হয়। অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন ১২ টন ও দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার। এই ক্ষেপণাস্ত্রটির রেঞ্জ ৭০০–১,২০০ কিলোমিটার।[৭] এটি ১,০০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত কনভেনশনাল পেলোড অথবা একটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।[২] এর গতি ২.৫ কিমি/সেকেন্ড।[৩] অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি (শর্ট রেঞ্জ) বা দুটি স্টেজ (ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ) দ্বারা গঠিত। এগুলি রেল ও রোড মোবাইল এবং সলিড প্রোপেলান্ট ইঞ্জিনে চলে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্ট্রাটেজিক ফোর্স কম্যান্ড অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে।[২]
অগ্নি-২ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-২
অগ্নি-২ ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ২,০০০-২,৫০০ কিলোমিটার। এর দৈর্ঘ্য ২০ মিটার, ব্যাস ১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৭ টন। অগ্নি-২ দুটি স্টেজেই সলিড প্রোপেলান্ট ইঞ্জিনে চলে।[১৭] চীন ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে অগ্নি-২ নির্মিত হয়েছে। ভারত জানিয়েছে তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি পাকিস্তান-কেন্দ্রিক নয়। নতুন দিল্লির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাকিস্তান বড় সমস্যা নয়। অগ্নি-২ চীন-ভারত দ্বৈরথের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে।[১৮] অগ্নি-২ চীনের পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।
অগ্নি-৩ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-৩
অগ্নি-৩ অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র বর্গের তৃতীয় অস্ত্র। অগ্নি-৩ দুটি স্টেজেই সলিড প্রোপেলান্টে চলে।[১৭] ২০০৬ সালের ৯ জুলাই ওডিশা উপকূলের হুইলার দ্বীপ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু উৎক্ষেপণের পর দ্বিতীয় স্টেজে গিয়ে রকেটটি পৃথক হতে অসমর্থ হয় এবং তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়। ২০০৮ সালের ৭ মে দ্বিতীয়বার উৎক্ষেপণের সময় অগ্নি-৩ সাফল্য অর্জন করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রটির পারমাণবিক অস্ত্র বহনক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অগ্নি-৩ ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ৩,৫০০ কিলোমিটার।[৫] এটি ১.২ টন পর্যন্ত ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।[১৯] বেইজিং ও সাংহাই সহ চীনের অধিকাংশ প্রধান শহর এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জের মধ্যে পড়ে।
জানা গিয়েছে, অগ্নি-৩ ক্ষেপণাস্ত্রটির সার্কুলার এরর প্রবাবল (সিইপি)-এর রেঞ্জ ৪০ মিটার। অগ্নি-৩ নিজস্ব রেঞ্জ শ্রেণীতে বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভুল স্ট্রাটেজিক ব্যালিস্টিক মিশাইল।[১৯][২০] ক্ষেপণাস্ত্র যত নির্ভুল হয়, তত তার "হত্যা ক্ষমতা" বৃদ্ধি পায় বলে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এটির মাধ্যমে ছোট ইয়েল্ড নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড (২০০ কিলোটন থার্মোনিউক্লিয়ার বা বুস্টেড ফিশন) ব্যবহার করেও মারাত্মক আঘাত হানা যায়। এর ফলে ভারত অন্যান্য পরমাণু ক্ষমতাধরদের তুলনায় কম ফিসাইল/ফিউশন উপাদান (প্লুটোনিয়াম/লিথিয়াম ডেটারাইড) করে অনেক বেশি পরিমাণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে সক্ষম হয়েছে। আগেকার পরমাণু-অস্ত্র ব্যবহারকারী ব্যালিস্টিক মিশাইলগুলির ক্ষেত্রে একই প্রকার মারাত্মক আঘাত হানতে বড় ইয়েল্ড (১-২ মেগাটন) ওয়ারহেড ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ত। জানা গিয়েছে, ছোট পেলোডে অগ্নি-৩ ৩,৫০০ কিলোমিটারের অনেক বেশি দূরত্বেও আঘাত হানতে সক্ষম।
অগ্নি-৪ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-৪
অগ্নি-৪ অগ্নি মিশাইল বর্গের চতুর্থ অস্ত্র। এটির আগেকার নাম "অগ্নি-২ প্রাইম"।[২১] ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর ওডিশার হুইলার দ্বীপ থেকে এটির পরীক্ষা হয়। এর রেঞ্জ ২,৫০০-৩,৫০০ কিলোমিটার।[১৩] অগ্নি-৪ অগ্নি-২ ও অগ্নি-৩-এর মাঝখানের ফাঁকটি পূরণ করেছে। এটি ১ টন ওয়ারহেড বহন করতে পারে। উচ্চ রেঞ্জে কাজ করার ক্ষমতার পাশাপাশি এর হত্যা ক্ষমতাও বেশি। অগ্নি-৪ স্টেট-অফ-দি-আর্ট প্রযুক্তিতে তৈরি। এতে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি রিং লেজার গিরো ও কমপোসিট রকেট মোটর আছে। এটিও সলিড প্রোপেলান্টে চলা দুই স্টেজের ক্ষেপণাস্ত্র। এর দৈর্ঘ্য ২০ মিটার এবং উৎক্ষেপণকালীন ওজন ১৭ টন।[২১] এটি রোড মোবাইল লঞ্চার থেকে ছোঁড়া যায়।[২১][২২][২৩]
অগ্নি-৫ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-৫
অগ্নি-৫ একটি সলিড ফুয়েলড ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিশাইল (আইসিবিএম)। ডিআরডিও এটি তৈরি করেছে। এটি ৫,০০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। দূরপাল্লার অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল। পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যভেদে সক্ষম এই আন্তঃমহাদেশীয় (আইসিবিএম) ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫ ভারতের সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। অর্থাৎ পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটির লক্ষ্যভেদের আওতায় চীনের রাজধানী বেইজিংসহ প্রায় সমস্ত এশিয়া মহাদেশ তো থাকছেই এমনকি ইউরোপের সবগুলো দেশ এবং আফ্রিকায় আঘাত হানতে পারবে এটি। ডিআরডিও জানিয়েছে, শুধুমাত্র আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর সব অঞ্চল অগ্নি-৫ এর আওতায় রয়েছে। । অগ্নি-৫ আইসিবিএম দুই স্টেজ-দূরপাল্লার অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল। পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যভেদে সক্ষম এই আন্তঃমহাদেশীয় (আইসিবিএম) ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫ ভারতের সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। অর্থাৎ পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটির লক্ষ্যভেদের আওতায় চীনের রাজধানী বেইজিংসহ প্রায় সমস্ত এশিয়া মহাদেশ তো থাকছেই এমনকি ইউরোপের সবগুলো দেশ এবং আফ্রিকায় আঘাত হানতে পারবে এটি। ডিআরডিও জানিয়েছে, শুধুমাত্র আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর সব অঞ্চল অগ্নি-৫ এর আওতায় রয়েছে। । অগ্নি-৫ আইসিবিএম দুই স্টেজ-বিশিষ্ট অগ্নি-৩ ক্ষেপণাস্ত্রটির সঙ্গে একটি তৃতীয় কমপোজিট স্টেজ জুড়ে তৈরি করা হয়েছে।[৩] ওজন কমানোর জন্য এটি হাই কমপোজিট কনটেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ১৭.৫ মিটার। এটি একটি ক্যানিস্টার লঞ্চ মিশাইল সিস্টেম। এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য, সহজে বহনযোগ্য ও যে কোনো জায়গা থেকে ছোঁড়া যায়।ভারত আশা করছে, আগামী ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে এ ক্ষেপণাস্ত্র সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত অস্ত্র হিসেবে চালু করা হবে[৩] এটির ওজন ৪৯ টন।[৩] গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মতে অগ্নী৫ ৮০০০কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম এবং ভারত পশ্চিমি শক্তির মধ্যে যাতে ভারত সম্পর্কে আতঙ্ক না ছড়ায় তাই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে এর ক্ষমতা কম করে দেখাচ্ছে৷
পর্ববর্তী পর্যায় সম্পাদনা
২০০৮ সালের মে মাসে ভারত ঘোষণা করেছে যে তারা নতুন প্রযুক্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ও স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেলের রেঞ্জ অন্তত ৪০% বৃদ্ধি করা হবে।[২৪][২৫][২৬] রেঞ্জিং ও ক্যালিব্রেশন টেস্টের পর ভবিষ্যতের অগ্নি বর্গের অস্ত্রগুলিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
এই নিবন্ধটি ভারতের একটি ক্ষেপনাস্ত্র সিরিজ সম্পর্কে। একই নামের অন্যান্য নিবন্ধের জন্য, অগ্নি (দ্ব্যর্থতা নিরসন) দেখুন।
অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র হল ভারতে সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি অধীনে নির্মিত মাঝারি থেকে আন্তর্মহাদেশীয় পাল্লার ব্যালিস্টিক মিশাইলের একটি বর্গ। ২০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী, অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র বর্গের অন্তর্গত ক্ষেপণাস্ত্রগুলি হলঃ
অগ্নি-১ মিডিয়াম-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ৭০০ – ১,২০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।
অগ্নি-২ ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ২,০০০- ২,৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।
অগ্নি-৩ ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ৩,০০০ - ৫,৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।
অগ্নি-৪ ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ৩,২০০- ৩,৭০০ কিলোমিটার রেঞ্জ।[১২][১৩]
অগ্নি-৫ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিশাইল, ৫,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জ[১৪][১৫]।
অগ্নি-৬ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিশাইল, ১০,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জ[১৬] (নির্মাণাধীন)।
অগ্নি (ক্ষেপণাস্ত্র)
অগ্নি-২ এমআরবিএম (ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল)
প্রকার
মিডিয়াম-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল(অগ্নি-১)
ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিশাইল (অগ্নি-২, অগ্নি-৩, অগ্নি-৪)
ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিশাইল (অগ্নি-৫)
উদ্ভাবনকারী
ভারত
ব্যবহার ইতিহাস
ব্যবহারকাল
(পরীক্ষা) ০৪/১১/৯৯, ০১/১৭/০১ ও ০৮/২৯/০৪
উৎপাদন ইতিহাস
উৎপাদনকারী
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠন (ডিআরডিও), ভারত ডায়নামিকস লিমিটেড (বিডিএল)
উৎপাদন
খরচ (প্রতিটি)
২৫-৩৫ কোটি টাকা[১]
তথ্যাবলি
ওজন
১২,০০০ কিলোগ্রাম(অগ্নি-১)[২]
১৬,০০০ কিলোগ্রাম (অগ্নি-২)
৪৮,০০০ কিলোগ্রাম (অগ্নি-৩)[৩]
৪৯,০০০ কিলোগ্রাম (অগ্নি-৫)[৩]
দৈর্ঘ্য
১৫ মি (অগ্নি-১)[২]
২১ মি (অগ্নি-২)[৪]
১৭ মি (অগ্নি-৩)[৫]
১৭.৫ মি (অগ্নি-৫)[৩]
ব্যাস
১.০ মি (অগ্নি-১, অগ্নি-২)
২.০ মি (অগ্নি-৩)
Warhead
স্ট্রাটেজিক নিউক্লিয়ার (১৫ কেটি থেকে ২৫০ কেটি), কনভেনশনাল এইচই-ইউনিটারি, পেনেট্রেশন, সাব-মিউনিশনস, ইনসেন্ডিয়ারি অথবা ফুয়েল এয়ার এক্সপ্লোসিভস
ইঞ্জিন
সিঙ্গল স্টেজ (অগ্নি-১)
টু-অ্যান্ড-আ-হাফ স্টেজ (অগ্নি-২)
টু স্টেজ (অগ্নি-৩) সলিড প্রোপেলান্ট ইঞ্জিন
অপারেশনাল
রেঞ্জ
৭০০-১,২০০ কিলোমিটার (অগ্নি-১)[২][৭]
২,০০০-৩,৫০০ কিলোমিটার (অগ্নি-২)[৪]
৩,৫০০-৫,৫০০ কিলোমিটার (অগ্নি-৩)
৫,০০০ কিলোমিটার (অগ্নি-৫)
ফ্লাইট উচ্চতা
৩০০ কিলোমিটার (অগ্নি-১)[৮]
২৩০ কিলোমিটার (অগ্নি-২),[৪][৯]
৩৫০ কিলোমিটার (অগ্নি-৩)[১০]
গতিবেগ
২.৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড (অগ্নি-১)[৩]
৩.৫ কিলোমিটার/সেকেন্ড (অগ্নি-২)[৪][৬]
নির্দেশনা
পদ্ধতি
রিং লেসার গাউরো-আইএসএস (ইনার্টিয়াল নেভিগেশন সিস্টেম), ক্ষেত্রবিশেষে পসিবল র্যাডার সিন কোরিলেশন সহ জিপিএস টার্মিনাল গাইডেন্স কর্তৃক বর্ধিত
লঞ্চ
প্লাটফর্ম
৮ x ৮ টাট্রা টিইএলএআর (ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার) রেল মোবাইল লঞ্চার. অগ্নি-১ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-১
২০০২ সালের ২৫ জানুয়ারি চাঁদিপুরে অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথম ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জে পরীক্ষিত হয়। অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন ১২ টন ও দৈর্ঘ্য ১৫ মিটার। এই ক্ষেপণাস্ত্রটির রেঞ্জ ৭০০–১,২০০ কিলোমিটার।[৭] এটি ১,০০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত কনভেনশনাল পেলোড অথবা একটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।[২] এর গতি ২.৫ কিমি/সেকেন্ড।[৩] অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি (শর্ট রেঞ্জ) বা দুটি স্টেজ (ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ) দ্বারা গঠিত। এগুলি রেল ও রোড মোবাইল এবং সলিড প্রোপেলান্ট ইঞ্জিনে চলে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্ট্রাটেজিক ফোর্স কম্যান্ড অগ্নি-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে।[২]
অগ্নি-২ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-২
অগ্নি-২ ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ২,০০০-২,৫০০ কিলোমিটার। এর দৈর্ঘ্য ২০ মিটার, ব্যাস ১ মিটার এবং ওজন প্রায় ১৭ টন। অগ্নি-২ দুটি স্টেজেই সলিড প্রোপেলান্ট ইঞ্জিনে চলে।[১৭] চীন ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে অগ্নি-২ নির্মিত হয়েছে। ভারত জানিয়েছে তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি পাকিস্তান-কেন্দ্রিক নয়। নতুন দিল্লির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পাকিস্তান বড় সমস্যা নয়। অগ্নি-২ চীন-ভারত দ্বৈরথের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে।[১৮] অগ্নি-২ চীনের পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম।
অগ্নি-৩ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-৩
অগ্নি-৩ অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র বর্গের তৃতীয় অস্ত্র। অগ্নি-৩ দুটি স্টেজেই সলিড প্রোপেলান্টে চলে।[১৭] ২০০৬ সালের ৯ জুলাই ওডিশা উপকূলের হুইলার দ্বীপ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু উৎক্ষেপণের পর দ্বিতীয় স্টেজে গিয়ে রকেটটি পৃথক হতে অসমর্থ হয় এবং তা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয়। ২০০৮ সালের ৭ মে দ্বিতীয়বার উৎক্ষেপণের সময় অগ্নি-৩ সাফল্য অর্জন করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রটির পারমাণবিক অস্ত্র বহনক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অগ্নি-৩ ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জ ৩,৫০০ কিলোমিটার।[৫] এটি ১.২ টন পর্যন্ত ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।[১৯] বেইজিং ও সাংহাই সহ চীনের অধিকাংশ প্রধান শহর এই ক্ষেপণাস্ত্রের রেঞ্জের মধ্যে পড়ে।
জানা গিয়েছে, অগ্নি-৩ ক্ষেপণাস্ত্রটির সার্কুলার এরর প্রবাবল (সিইপি)-এর রেঞ্জ ৪০ মিটার। অগ্নি-৩ নিজস্ব রেঞ্জ শ্রেণীতে বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভুল স্ট্রাটেজিক ব্যালিস্টিক মিশাইল।[১৯][২০] ক্ষেপণাস্ত্র যত নির্ভুল হয়, তত তার "হত্যা ক্ষমতা" বৃদ্ধি পায় বলে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এটির মাধ্যমে ছোট ইয়েল্ড নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড (২০০ কিলোটন থার্মোনিউক্লিয়ার বা বুস্টেড ফিশন) ব্যবহার করেও মারাত্মক আঘাত হানা যায়। এর ফলে ভারত অন্যান্য পরমাণু ক্ষমতাধরদের তুলনায় কম ফিসাইল/ফিউশন উপাদান (প্লুটোনিয়াম/লিথিয়াম ডেটারাইড) করে অনেক বেশি পরিমাণ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে সক্ষম হয়েছে। আগেকার পরমাণু-অস্ত্র ব্যবহারকারী ব্যালিস্টিক মিশাইলগুলির ক্ষেত্রে একই প্রকার মারাত্মক আঘাত হানতে বড় ইয়েল্ড (১-২ মেগাটন) ওয়ারহেড ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ত। জানা গিয়েছে, ছোট পেলোডে অগ্নি-৩ ৩,৫০০ কিলোমিটারের অনেক বেশি দূরত্বেও আঘাত হানতে সক্ষম।
অগ্নি-৪ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-৪
অগ্নি-৪ অগ্নি মিশাইল বর্গের চতুর্থ অস্ত্র। এটির আগেকার নাম "অগ্নি-২ প্রাইম"।[২১] ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর ওডিশার হুইলার দ্বীপ থেকে এটির পরীক্ষা হয়। এর রেঞ্জ ২,৫০০-৩,৫০০ কিলোমিটার।[১৩] অগ্নি-৪ অগ্নি-২ ও অগ্নি-৩-এর মাঝখানের ফাঁকটি পূরণ করেছে। এটি ১ টন ওয়ারহেড বহন করতে পারে। উচ্চ রেঞ্জে কাজ করার ক্ষমতার পাশাপাশি এর হত্যা ক্ষমতাও বেশি। অগ্নি-৪ স্টেট-অফ-দি-আর্ট প্রযুক্তিতে তৈরি। এতে দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি রিং লেজার গিরো ও কমপোসিট রকেট মোটর আছে। এটিও সলিড প্রোপেলান্টে চলা দুই স্টেজের ক্ষেপণাস্ত্র। এর দৈর্ঘ্য ২০ মিটার এবং উৎক্ষেপণকালীন ওজন ১৭ টন।[২১] এটি রোড মোবাইল লঞ্চার থেকে ছোঁড়া যায়।[২১][২২][২৩]
অগ্নি-৫ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: অগ্নি-৫
অগ্নি-৫ একটি সলিড ফুয়েলড ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিশাইল (আইসিবিএম)। ডিআরডিও এটি তৈরি করেছে। এটি ৫,০০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। দূরপাল্লার অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল। পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যভেদে সক্ষম এই আন্তঃমহাদেশীয় (আইসিবিএম) ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫ ভারতের সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। অর্থাৎ পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটির লক্ষ্যভেদের আওতায় চীনের রাজধানী বেইজিংসহ প্রায় সমস্ত এশিয়া মহাদেশ তো থাকছেই এমনকি ইউরোপের সবগুলো দেশ এবং আফ্রিকায় আঘাত হানতে পারবে এটি। ডিআরডিও জানিয়েছে, শুধুমাত্র আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর সব অঞ্চল অগ্নি-৫ এর আওতায় রয়েছে। । অগ্নি-৫ আইসিবিএম দুই স্টেজ-দূরপাল্লার অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল। পাঁচ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যভেদে সক্ষম এই আন্তঃমহাদেশীয় (আইসিবিএম) ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫ ভারতের সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। অর্থাৎ পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রটির লক্ষ্যভেদের আওতায় চীনের রাজধানী বেইজিংসহ প্রায় সমস্ত এশিয়া মহাদেশ তো থাকছেই এমনকি ইউরোপের সবগুলো দেশ এবং আফ্রিকায় আঘাত হানতে পারবে এটি। ডিআরডিও জানিয়েছে, শুধুমাত্র আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর সব অঞ্চল অগ্নি-৫ এর আওতায় রয়েছে। । অগ্নি-৫ আইসিবিএম দুই স্টেজ-বিশিষ্ট অগ্নি-৩ ক্ষেপণাস্ত্রটির সঙ্গে একটি তৃতীয় কমপোজিট স্টেজ জুড়ে তৈরি করা হয়েছে।[৩] ওজন কমানোর জন্য এটি হাই কমপোজিট কনটেন্ট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য ১৭.৫ মিটার। এটি একটি ক্যানিস্টার লঞ্চ মিশাইল সিস্টেম। এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য, সহজে বহনযোগ্য ও যে কোনো জায়গা থেকে ছোঁড়া যায়।ভারত আশা করছে, আগামী ২০১৪-১৫ সালের মধ্যে এ ক্ষেপণাস্ত্র সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত অস্ত্র হিসেবে চালু করা হবে[৩] এটির ওজন ৪৯ টন।[৩] গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের মতে অগ্নী৫ ৮০০০কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম এবং ভারত পশ্চিমি শক্তির মধ্যে যাতে ভারত সম্পর্কে আতঙ্ক না ছড়ায় তাই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে এর ক্ষমতা কম করে দেখাচ্ছে৷
পর্ববর্তী পর্যায় সম্পাদনা
২০০৮ সালের মে মাসে ভারত ঘোষণা করেছে যে তারা নতুন প্রযুক্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ও স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেলের রেঞ্জ অন্তত ৪০% বৃদ্ধি করা হবে।[২৪][২৫][২৬] রেঞ্জিং ও ক্যালিব্রেশন টেস্টের পর ভবিষ্যতের অগ্নি বর্গের অস্ত্রগুলিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
Comments
Post a Comment