সূর্য -The sun details

                                     সূর্য                                       
                                                                            সূর্য সৌরজগতের মাতৃতারা ও এর প্রধানতম উপাদান। সূর্যের ভর অনেক বেশি। এই ভরের কারণে অভ্যন্তরভাগে যে বিপুল ঘনত্বের সৃষ্টি হয় তা-ই নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়াকে চলমান রাখে। এই বিক্রিয়ার কারণে বিপুল শক্তি নির্গত হয় যে শক্তির অধিকাংশ বিভিন্ন তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ যেমন দৃশ্যমান বর্ণালী হিসেবে মহাকাশে নির্গত হয়।

তারার শ্রেণীবিন্যাস অনুসারে সূর্য মাঝারি ধরনের হলুদ বামন শ্রেণীতে পড়ে। কিন্তু সূর্যবে এভাবে খাটো করা এক দিক দিয়ে ঠিক হবে না। কারণ আমাদের ছায়াপথের অন্যান্য তারার তুলনায় সূর্য বেশ বড় এবং উজ্জ্বল। হের্টস্‌স্প্রুং-রাসেল চিত্র অনুসারে তারাসমূহের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। এটা প্রকৃতপক্ষে তারার পৃষ্ঠীয় তাপমাত্রার বিপরীতে উজ্জ্বলতাকে স্থাপন করে অঙ্কিত একটি লেখচিত্র। সাধারণত, তারার উত্তাপ যত বেশি হয় তার উজ্জ্বলতাও তত বেশি হয়। চিত্রের এই গড়নকে যে তারাগুলো অনুসরণ করে তারা প্রধান ধারায় আছে বলে ধরে নেয়া হয়। সূর্যের অবস্থান এর ঠিক মধ্যখানে। সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বল এবং উত্তপ্ত তারা বেশ বিরল হলেও তার থেকে কম উজ্জ্বলতা এবং উত্তাপবিশিষ্ট তারার সংখ্যা অনেক।

প্রধান ধারার যেখানে সূর্য আছে তা থেকে বোঝা যায়, বর্তমানে সে তার জীবনকালের মুখ্য সময়ে আছে। অর্থাৎ সেখানে নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রোজেনের ভাণ্ডার এখনও ফুরিয়ে যায়নি। সূর্যের উজ্জ্বলতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইতিহাসের একেবারে প্রাথমিক সময়ে এর উজ্জ্বলতা বর্তমান থেকে শতকরা ৭৫ ভাগ বেশি ছিল।

সূর্যের হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের অনুপাত নির্ণয়ের মাধ্যমে জানা গেছে সে তার জীবনকালের মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে। এক সময় সে প্রধান ধারা থেকে সরে যাবে, ক্রমান্বয়ে বড়, উজ্জ্বল, শীতল ও লাল হতে থাকবে। এভাবে ৫০০ কোটি বছরের মধ্যে লোহিত দানবে পরিণত হবে। সে সময় তার দীপন ক্ষমতা হবে বর্তমানের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি।

সূর্য পপুলেশন ১ তারা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ মহাবিশ্বের বিবর্তনের শেষ পর্যায়ে এটি গঠিত হয়েছে। এতে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌলের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত প্রবীণ পপুলেশন ২ তারার তুলনায় বেশি। হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌলগুলো প্রাচীন ও বিস্ফোরিত তারার কেন্দ্রে প্রথমবারের মত গঠিত হয়েছিল। তাই মহাবিশ্ব এই ভারী পরমাণু দিয়ে সমৃদ্ধ হওয়ার পূর্বেই প্রথম প্রজন্মের তারাগুলো মৃত্যুবরণ করেছিল। প্রাচীনতম তারাগুলোতে ধাতু (হিলিয়াম পরবর্তী মৌলসমূহ) খুব কম, কিন্তু অপেক্ষাকৃত নবীন তারায় ধাতুর পরিমাণ বেশি। সূর্যের মধ্যে অনেক ধাতু থাকার কারণেই এই গ্রহ জগৎ গঠিত হতে পেরেছে বলে ধারণা করা হয়। কারণ, ধাতুর বিবৃদ্ধি থেকেই গ্রহ গঠিত হয়।

আন্তঃগ্রহীয় মাধ্যম সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: আন্তঃগ্রহীয় মাধ্যম
দৃশ্যমান আলোর পাশাপাশি সূর্য অবিরাম ধারায় প্রবাহিত আহিত কণা (প্লাজমা) বিকিরণ করে। এই কণা প্রবাহের সাথে ঝড়ের সাদৃশ্য আছে বিধায় একে সৌরবায়ু বলা হয়। সূর্য থেকে ছুটে আসা এই বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার। এ বায়ুর কারণে একটি ক্ষীণ বায়ুমণ্ডলের (সৌরমণ্ডল) সৃষ্টি হয় যা সৌরজগতের বাইরের দিকে প্রায় ১০০ জ্যোতির্বিজ্ঞান একক দূরত্ব (হেলিওপজ) পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। এরই নাম আন্তঃগ্রহীয় মাধ্যম। সূর্যের পৃষ্ঠতলে সৌরঝলক এবং জ্যোতির্বলয়ের ভর নিক্ষেপণের মত ভূচুম্বকীয় ঝড়গুলো মহাকাশ আবহাওয়া তৈরির মাধ্যমে সৌরমণ্ডলের ক্ষতি সাধন করে। সূর্যের ঘূর্ণায়মান চৌম্বক ক্ষেত্রে আন্তঃগ্রহীয় মাধ্যমের উপর ক্রিয়া করে সৌরমণ্ডলীয় প্রবাহ পাত  তৈরি করে। এটা সৌরজগতের সর্ববৃহৎ কাঠামো হিসেবে পরিচিত।

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তার বায়ুমণ্ডলকে সৌরবায়ুর ক্রিয়া থেকে রক্ষা করে। শুক্র ও মঙ্গল গ্রহে চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকায় সৌরবায়ুর প্রভাবে তাদের বায়ুমণ্ডল ক্রমান্বয়ে মহাকাশে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সৌরবায়ুর সাথে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মিথস্ক্রিয়ার কারণে অপরূপ মেরুজ্যোতির সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর চৌম্বক মেরুর নিকটে এই জ্যোতি দেখা যায়।

মহাজাগতিক রশ্মি সৌরজগতের বাইরে উৎপন্ন হয়। এক্ষেত্রে সৌরমণ্ডল সৌরজগতের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোও কিছুটা প্রতিরক্ষার কাজ করে। আন্তঃগ্রহীয় মাধ্যমে মহাজাগতিক রশ্মির ঘনত্ব এবং সূর্যের চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তি অনেক সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তিত হয়। এ কারণে সৌরজগতের ভেতরে মহাজাগতিক বিকিরণের পরিমাণও সময় সময় পরিবর্তিত হয়। অবশ্য কি পরিমাণে পরিবর্তিত হয় তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

মহাজাগতিক ধূলির অন্তত দুটি চাকতির মত অঞ্চল এই আন্তঃগ্রহীয় মাধ্যমে অবস্থান করে। প্রথমটির নাম রাশিচক্রের ধূলিমেঘ যা সৌরজগতের ভেতরের দিকে অবস্থান করে এবং রাশিচক্রের আলো সৃষ্টির কারণ হিসেবে কাজ করে। গ্রহগুলোর মিথস্ক্রিয়ার কারণে গ্রহাণু বেষ্টনীতে যে সংঘর্ষের সূত্রপাত

Comments

Popular posts from this blog

বাসকের অতুলনীয় গুনাগুণ(basak patar gunagun)

ত্বকের যত্নের জন্য গোলাপ জল উপযোগী(skin ke lite rose water ki upkarita)

মশার প্রমশার প্রজনন কমাতে কি কি করনীয়ঃ(mosquito killed)