মানবদেহের রক্তকণিকা

                    মানবদেহের  রক্তকণিকা


নীল স্লাইড স্টেইন ব্যবহার করে মাইক্রোস্কোপে দেখা মানবদেহের লোহিত ও শ্বেত রক্তকণিকা

রক্তের উপাদান
রক্তকোষ (মাঝে মাঝে হেমাটোসাইট বলা হয়) হল হেমাটোপয়েসিস প্রক্রিয়ায় তৈরিকৃত একধরণের কোষ, যা সাধারণত রক্তে পাওয়া যায়। স্তন্যপায়ীদের  রক্তের রক্তকোষগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথাঃ

লোহিত রক্তকণিকা - ইরাথ্রোসাইট
শ্বেত রক্তকণিকা - লিউকোসাইট
অণুচক্রিকা - থ্রম্বোসাইট
একত্রে, এই তিন ধরণের রক্তকোষ মানবদেহের সম্পূর্ণ রক্তটিস্যুর প্রায় ৪৫% এবং অবশিষ্ট ৫৫% আয়তন রক্তরস দ্বারা পূর্ণ।[১]

কোষের মোট আয়তনের তুলনায় এই আয়তনের শতাংশকে (৪৫%) বলা হয়হেমাট্রোসাইট যা সেন্ট্রিফিউজ বা ফ্লো সাইমেট্রির মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়।

হিমোগ্লোবিন (লোহিত রক্তকণিকার প্রধান উপাদান) এক ধরণের লৌহ-ধারণকারী প্রোটিন যা টিস্যু থেকে ফুসফুসে অক্সিজেন এবং ফুসফুস থেকে টিস্যুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবহণ করে।

লোহিত রক্তকণিকা (ইরাথ্রোসাইট) সম্পাদনা

মূল নিবন্ধ: লোহিত রক্তকণিকা
লোহিত রক্তকণিকা রক্তের সর্বপ্রধান কোষ বা কণিকা  যা মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ফুসফুস থেকে দেহের কলাগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে ফুসফুস  বা ফুলকার মধ্যকার কৈশিক নালির মধ্যে সংবহণের  সময় শ্বাসবায়ু থেকে লোহিত রক্তকণিকাতে অক্সিজেন সংগৃহিত হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড  পরিত্যক্ত হয়।[২] অন্যান্য কলায় কৈশিকনালীর মাধ্যমে রক্ত সংবহনের সময় লোহিত রক্তকণিকা থেকে অক্সিজেন কোষে স্থানান্তরিত হয় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বিপরীতে অর্থাৎ লোহিত রক্তকণিকাতে  প্রবাহিত হয়। এই কণিকার আয়ু ১২০ দিন। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় এভাবে এরা পুনরায় মনোপোটেন্ট স্টেম সেল প্রস্তুত করে ও তৈরি হয়। তারা শ্বেত রক্তকণিকার সাথে দেহের কোষের প্রতিরক্ষার কাজ করে।

শ্বেত রক্তকণিকা (লিউকোসাইট) সম্পাদনা

: শ্বেত রক্তকণিকা
শ্বেত রক্তকণিকা দেহের প্রতিরক্ষার কাজ করে। এটি নানা ধরণের সংক্রামণকারী রোগ থেকে মানুষকে  রক্ষা করে। পাঁচটি ভিন্ন ধরণের লিউকোসাইট রয়েছে[৩], তবে তারা প্রত্যেকেই বোন ম্যারোর মধ্যকার এক ধরণের মাল্টিপোটেন্ট কোষ থেকে সৃষ্টি হয় যাকে হেমাপয়েটিক স্টেম সেল বলা হয়, তারা মানবদেহে  ৩-৪ দিন থাকে। রক্ত এবং লসিকা সহ সারা মানবদেহেই লিউকোসাইট পাওয়া যায়[৪]।

অণুচক্রিকা (থ্রম্বোসাইট) সম্পাদনা

: অণুচক্রিকা
অণুচক্রিকা বা থ্রম্বোসাইট বা প্লেটলেট হল অতিক্ষুদ্র, অনিয়মিত আকারের কোষ (এতে কোন ডিএনএধারী নিউক্লিয়াস নেই)। এর ব্যাস ২-৩ µm[৫] এবং প্রিকার্সর মেগাকারিওসাইটের গাঁজান থেকে সৃষ্টি হয়। এর আয়ু বড়জোর ৫-৯ দিন। অণুচক্রিকা বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উৎস। স্তন্যপায়ীদের দেহে এরা সংবাহিত হয় এবং রক্ততঞ্চনে অর্থাৎ ক্ষতস্থানের রক্ত জমাট বাঁধায় নিয়োজিত থাকে। অণুচক্রিকা সূতার আঁশের ন্যায় রক্তকে জমাট বাঁধায়।

অণুচক্রিকার সংখ্যা খুব কমে গেলে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে। আবার অণুচক্রিকার সংখ্যা খুব বেরে গেলে তা রক্তনালিকাগুলোকে বাঁধা দিয়ে থ্রম্বোসিস ঘটাতে পারে এবং এমন পরিস্থিতিতে স্ট্রোক, মাইওকার্ডিয়াল ইনফ্র্যাকশন, ফুসফুসীয় ধমনীরোধ  এবং রক্তনালিকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অণুচক্রিকার  অস্বাভাবিকতা বা রোগকে থ্রম্বোসাইটোপ্যাথি বলা হয়[৬] যা হতে পারে অণুচক্রিকা কমে গেলে (থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া), অণুচক্রিকার স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হলে (থ্রম্বোস্টেনিয়া) কিংবা অণুচক্রিকার  সংখ্যা বেড়ে গেলে (থ্রম্বোসাইটোসিস)। এছাড়া বেশকিছু রোগের কারণেও অণুচক্রিকা কমতে পারে যেমন ডেঙ্গু বা হেপারিন-ইনডিউজড থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (এইচআইটি)।

অণুচক্রিকা বিভিন্ন বৃদ্ধিবর্ধক উপাদান উৎপন্ন করে যেমন প্লেটলেট-ডেপরাইভড্‌ গ্রোথ ফ্যাক্টর (পিডিজিএফ), এ পটেন্ট কেমোট্যাক্টিক এজেন্ট এবং টিজিএফ বেটা যা অতিরিক্ত কোষীয় মাতৃকাকে তরান্বিত করে। উভয় বৃদ্ধিবর্ধক উপাদান সংযোজক কলার পুনর্গঠন এবং পুনঃনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও আরো কিছু বৃদ্ধিবর্ধক উপাদানও তৈরি করে অণুচক্রিকা যেমন ফাইব্রোব্লাস্ট গ্রোথ ফ্যাক্টর, ইনসুলিন-এর ন্যায় গ্রোথ ফ্যাক্টর-১, প্লেটলেট-ডেপরাইভড এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর এবং ভাস্কুলার এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফ্যাক্টর। এসব উপাদানের স্থানীয় প্রয়োগ প্লেটলেট-রিচ প্লাজমা (পিআরপি)-এর ঘনত্ব বাড়ায় এবং ক্ষত সারাতে যুগ-যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে[৭][৮][৯][১০][১১][১২][১৩]।

সম্পূর্ণ রক্তগণনা

আবিষ্কার সম্পাদনা

১৬৫৮ সালে ওলন্দাজ প্রকৃতিবিদ জ্যান সোয়ামারডাম  সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্রে লোহিত রক্তকণিকা  পরিদর্শন করেন এবং ১৬৯৫ সালে অণুবীক্ষণ যন্ত্রবিদ ওলন্দাজ এনথনি ভন লিউয়েনহুক সর্বপ্রথম লাল দেহকোষ (তখন বলা হত)-এর চিত্র অঙ্কন করেন। ১৮৪২ সালের আগ পর্যন্১৬৫৮ সালে ওলন্দাজ প্রকৃতিবিদ জ্যান সোয়ামারডাম  সর্বপ্রথম অণুবীক্ষণ যন্ত্রে লোহিত রক্তকণিকা  পরিদর্শন করেন এবং ১৬৯৫ সালে অণুবীক্ষণ যন্ত্রবিদ ওলন্দাজ এনথনি ভন লিউয়েনহুক সর্বপ্রথম লাল দেহকোষ (তখন বলা হত)-এর চিত্র অঙ্কন করেন। ১৮৪২ সালের আগ পর্যন্ত কোন প্রকার রক্তকোষ আবিষ্কৃত হয়নি। সেই বছর ফরাসি চিকিৎসাবিদ আলফ্রেড দোনে অণুচক্রিকা আবিষ্কার করেন। পরবর্তী বছরই ফরাসি মেডিসিনের অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল আনড্রেল এবং ব্রিটিশ চিকিৎসাবিদ উইলিয়াম এডিসন কর্তৃক সহসা লোহিত রক্তকণিকা  দর্শিত হয়। উভয়েই বিশ্বাস করতেন যে লোহিত এবং শ্বেত রক্তকণিকা হল রোগের রদ-বদল। এই আবিষ্কার রক্তবিদ্যা নামক চিকিৎসাজগতের নতুন এক শাখার জন্ম দেয়। যদিও কলা ও কোষের আবিষ্কার ঘটে যায়, তবুও ১৮৭৯ সালের আগ পর্যন্ত শারীরবিদ্যার  রক্তকোষের বিষয়ে তেমন কোন জ্ঞান অর্জিত হয়না। পরবর্তীতে পল এহ্‌রলিচ (Paul Ehrlich) পার্থক্যমূলক পদ্ধতিতে রক্তকোষ গণনা বিষয়ক তাঁর নিজস্ব পদ্ধতি প্রকাশ করেন.[১৪]

Comments

Popular posts from this blog

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা(patharkuchi Patti ka upkar)

রামায়ণ(RAMAYAN)full story of bengali

সুনামি সৃষ্টির কারণ