সুনামি সৃষ্টির কারণ

                                   সুনামি

সুনামি লক্ষণীয় থাইল্যান্ড ২৬শে ডিসেম্বর ২৬, ২০০৪
সুনামি (জাপানি ভাষায়: 津波 [tsɯnami], আক্ষরিক অর্থে 'পোতাশ্রয় ঢেউ' বা 'harbor wave')[১] এক প্রকার জলোচ্ছ্বাস, বস্ত‌ুত সুনামিতে পোতাশ্রয়েই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।[২] ইংরেজি ভাষায়: tsunami উচ্চারণ: /(t)suːˈnɑːmi/ (t)soo-NAH-mee) হলো সাগর বা নদী বা অন্য কোনো জলক্ষেত্রে ভূমিকম্পের, ভূমিধ্বসের কিংবা আগ্নেয়গিরির  উদ্‌গীরণের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস বা ঢেউ।[২]

নামকরণ সম্পাদনা

"সুনামি" নামটি জাপানি ভাষার শব্দ থেকে উৎসারিত। জাপানি শব্দটিকে ইংরেজিতে লিখলে হয় "Tsunami", সে হিসেবে বাংলায়ও প্রথম প্রথম "ৎসুনামি" নামটি ব্যবহ‌ৃত হয়। পরে উচ্চারণগত বানান, অর্থাৎ "সুনামি" সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

সুনামি সৃষ্টির কারণ সম্পাদনা

সুনামি বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে। কারণগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ভূমিধ্বস অন্যতম। তন্মধ্যে দুটি কারণ উল্লেখযোগ্য:

সমুদ্রসমতলের ২০-৩০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্প সংঘটন;
টেকটনিক প্লেটের আকস্মিক উত্থান-পতন
সমুদ্রসমতলের ২০-৩০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্প হলে তা সমুদ্র তলদেশের মাটিকে যেমন নাড়িয়ে দেয়, তেমনি খুব স্বাভাবিকভাবেই তার সাথে সম্পর্কিত‌ জলকে নাড়িয়ে দেয়। ভূমির কম্পন যখন জলে সঞ্চালিত হয়, তখন তার ফলে সুনামির উৎপত্তি হতে পারে। এছাড়াও সাধারণত কার্বন চক্রের প্রভাবে ভূ-অভ্যন্তরে টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়া হতে থাকে। এভাবে কখনও কোনো একটি প্লেট অপর প্লেটের দিকে অনবরত ধাক্কা দিতে থাকলে একসময় একটি আরেকটির উপরে উঠে যায়। তখন ঐ স্থানের ভূত্বক আচমকা উঁচু হয়ে যায়, এমনকি এভাবে ছোট টিলা থেকে পাহাড় সমান পর্যন্ত হঠাৎ ভূত্বক উঁচু হয়ে যেতে পারে। সমুদ্র, নদী, জলাশয় কিংবা অন্য কোনো বৃহৎ জলক্ষেত্রের নিচের ভূত্বক এভাবে ফুলে উঠলে তখন ঐ জলক্ষেত্রের পানিও হঠাৎ ফুলে উঠে সুনামির সৃষ্টি হয়।

বিবরণ সম্পাদনা

সুনামির ক্ষেত্রে কম্পনজনিত বা তাড়নজনিত কারণে ফুলে উঠা পানি সলিটনের মতো বিশাল এক বা একাধিক ঢেউয়ের সৃষ্টি করে, এবং তা চারিদিকে সমান মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ঢেউ দ্রুততার সাথে পাড়ে বা পাড়গুলোতে এসে আছড়ে পড়ে। বিশাল সমুদ্রের ক্ষেত্রে, উত্থিত ঢেউ নিকটবর্তি ভূভাগের দিকে ধাবিত হয়। কখনও কখনও এই পাহাড় সমান পানি, বিশাল জলক্ষেত্র ঠেলে আসতে আসতে দূর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু কখনও কখনও তীব্র মাত্রার ঢেউ সব বাধা পার হয়ে, কিংবা ভূভাগের কাছে সংঘটিত ভূত্বকের উত্থানে তীব্র মাত্রার ঢেউ কোনো বাধা ছাড়াই নিকটবর্তি ভূভাগে এসে আঘাত করে। এধরনের আকষ্মিক জলোচ্ছাসে উপকূলীয় অঞ্চলে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। জলক্ষেত্রের নিচে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত হলেও পানি এভাবে ফুলে উঠতে পারে এবং সুনামি ঘটাতে পারে। আবার স্থলভাগের কোনো ভূমি থেকে ভূমিধ্বস হলেও তা জলক্ষেত্রে এমন সুনামির সৃষ্টি করতে পারে।

সুনামি যে সবসময়ই বিশাল ঢেউ হয়ে আসে এমনটাও ঠিক নয়। কখনও কখনও এমনও হতে পারে, সমুদ্রের গভীরে থাকাকালীন সুনামির ঢেউটি নৌকার নিচ দিয়ে চলে গেছে অথচ টেরই পাওয়া যায়নি। এর মূল কারণ হলো সমুদ্রের নিচ অনেক গভীর হয়ে থাকে এবং ফুলে উঠা পানি সহজেই স্থিতাবস্থায় আসার মতো তল পায়। কিন্তু সমুদ্র যতই ভূভাগের কাছাকাছি হয়, ততই অগভীর হতে থাকে সমুদ্র, তাই এধরনের ঢেউও চূঁড়ার আকার ধারণ করতে শুরু করে। কিছু কিছু সুনামি ভূভাগের দিকে অগ্রসর হতে হতে ১০০ ফুট (৩০ মিটার) পর্যন্ত উঁচুও হতে পারে। এপর্যন্ত সবচেয়ে বড় সুনামি মাপা হয়েছে ২১২ ফুট উচ্চতার (৬৫ মিটার)।[২]

গভীর জলে সুনামি প্রতি ঘন্টায় ৬০০ মাইল (১,০০০ কিলোমিটার) গতির হতে পারে। সুনামির ঢেউ সাধারণত একটি হয় না, হয় ধারাবাহিক কয়েকটি, এবং একটি ঢেউয়ের চূঁড়া থেকে আরেকটি ঢেউয়ের চূঁড়ার দূরত্ব ১০০ মাইলের (১৬০ কিমি) মতো হতে পারে। তাই একটি বড় ঢেউ আঘাত করার মোটামুটি ১ ঘন্টা বা সামান্য বেশি সময় পর দ্বিতীয় আরেকটি এবং আরো ১ ঘন্টা পর তৃতীয় আরেকটি -এভাবে ঢেউগুলো ভূভাগে এসে আঘাত করতে পারে।

Comments

Popular posts from this blog

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা(patharkuchi Patti ka upkar)

রামায়ণ(RAMAYAN)full story of bengali