সৌর জগতে-solar system
সৌর জগতে
সূর্য ও এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু
সৌর জগতের প্রধান বস্তুসমূহ (স্কেল অনুযায়ী নয়; বাম থেকে ডানে): প্লুটো, নেপচুন, ইউরেনাস, শনি, বৃহস্পতি, গ্রহাণু বেষ্টনী, সূর্য, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, চাঁদ এবং মঙ্গল। একেবারে বামে একটি ধূমকেতুও দেখা যাচ্ছে।
সৌরজগৎ বলতে সূর্য এবং এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুকে বোঝায়। এর মধ্যে আছে: আটটি গ্রহ, তাদের ১৭৩টি জানা প্রাকৃতিক উপগ্রহ, কিছু বামন গ্রহ ও তাদের চারটি কিছু প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং কোটি কোটি ক্ষুদ্র বস্তু।[১] শেষোক্ত শ্রেণীর মধ্যে আছে গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু এবং আন্তঃগ্রহীয় ধূলি মেঘ। মৌলিক ব্যাখ্যা অনুসারে সৌর জগতের মধ্যে অবস্থান করছে: সূর্য (জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রতীক ), চারটি পার্থিব গ্রহ, একটি গ্রহাণু বেষ্টনী যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথুরে বস্তু দ্বারা গঠিত, চারটি গ্যাসীয় দৈত্য এবং একটি দ্বিতীয় বেষ্টনী যা কাইপার বেষ্টনী নামে পরিচিত, এতে বরফ শীতল পদার্থ রয়েছে। কাইপার বেষ্টনীর পরে রয়েছে বিক্ষিপ্ত বস্তুসমূহ, হেলিওপজ এবং সবশেষে উওর্ট মেঘ। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে গ্রহগুলো হল: বুধ (), শুক্র (), পৃথিবী (), মঙ্গল (), বৃহস্পতি (), শনি (), ইউরেনাস (), এবং নেপচুন ()। আটটির মধ্যে ছয়টি গ্রহের নিজস্ব প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে। গ্যাসীয় দানবের প্রত্যেকটির চারদিকে আবার গ্রহীয় বলয় রয়েছে যা ধূলিকণা ও অন্যান্য কণা দ্বারা গঠিত। পৃথিবী ব্যতীত সব গ্রহের ইংরেজি নাম বিভিন্ন গ্রিক দেবতাদের নামে রাখা হয়েছে। তিনটি বামন গ্রহ হচ্ছে: প্লুটো (), কাইপার বেষ্টনীর বৃহত্তম বস্তু, সেরেস (), গ্রহাণু বেষ্টনীর বৃহত্তম বস্তু, এবং এরিস, যা বিক্ষিপ্ত চাকতির মধ্যে অবস্থান করে। অভ্যন্তরভাগের গ্রহসমূহ সম্পাদনা
পার্থিব গ্রহ
ভেতরের অংশে মোট চারটি গ্রহ আছে যেগুলোকে পার্থিব গ্রহ বলা হয়। এই গ্রহগুলো খুব ঘন এবং এগুলোর গাঠনিক উপাদান পাথুরে। এগুলোর উপগ্রহের সংখ্যা খুবই কম, কোন কোনটির উপগ্রহই নেই। এছাড়া এগুলোর চারদিকে কোন বলয়ও নেই। এদের গাঠনিক উপাদান মূলত বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যাদের গলনাঙ্ক খুব বেশি। যেমন, তাদের ভূত্বক ও ম্যান্ট্ল সিলিকেট দ্বারা গঠিত এবং কেন্দ্র গঠিত লৌহ ও এ ধরনের অন্যান্য ধাতু দ্বারা। চারটির মধ্যে তিনটি গ্রহের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বায়ুমণ্ডল আছে। এই গ্রহ তিনটি হল শুক্র, মঙ্গল এবং পৃথিবী। আর সবগুলোরই সংঘর্ষ খাদ এবং ফাটল উপত্যকা ও আগ্নেয়গিরির মত টেকটোনিক পৃষ্ঠতলীয় কাঠামো আছে। ভেতরের দিকের গ্রহগুলোর সাথে নগণ্য গ্রহগুলোকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। যে গ্রহগুলো থেকে সূর্যের দূরত্ব পৃথিবীর চেয়ে কম সেগুলোকে নগণ্য গ্রহ বলে। বুধ এবং শুক্র নগণ্য গ্রহ।
বুধ গ্রহ
বুধ গ্রহ সূর্যের সবচেয়ে কাছে (০.৪ এইউ) এবং এটি সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম (০.৫৫ পার্থিব ভর) গ্রহ। এর কোন প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেই। সংঘর্ষ খাদ ছাড়া এর একমাত্র জানা ভৌগোলিক ফিচার হচ্ছে লতিযুক্ত রিজ বা rupe। ইতিহাসের প্রথম দিকে যখন গ্রহের সংকোচন চলছিল তখন এগুলো সৃষ্টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। বুধের বায়ুমণ্ডল অতি নগণ্য যার প্রধান উপাদান সৌরবায়ুর প্রভাবে পৃষ্ঠ থেকে সজোরে উৎক্ষিপ্ত পরমাণু। এর তুলনামূলক বড় লৌহ কেন্দ্র এবং সরু ম্যান্ট্লের ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন অনুকল্পে বলা হয়েছে, একটি বড় সংঘর্ষের মাধ্যমে গ্রহটির বহিস্তর ছিন্নভিন্ন হয়ে মহাকাশে বিলীন হয়ে গেছে এবং নিকটবর্তী সূর্যের শক্তির প্রভাবে এর কোন বিবৃদ্ধিও ঘটেনি।
শুক্র গ্রহ
শুক্র গ্রহের আকার (০.৮১৫ পার্থিব ভর) প্রায় পৃথিবীর সমান এবং সূর্য থেকে এর দূরত্ব ০.৭ এইউ। পৃথিবীর মতই এই গ্রহের ম্যান্ট্ল সিলিকেট দ্বারা এবং কেন্দ্রভাগ লৌহ দ্বারা গঠিত। এর বায়ুমণ্ডল বেশ পুরু এবং এর ভেতরের অংশে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবশ্য গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় অনেক শুষ্ক এবং এর বায়ুমণ্ডল আমাদের থেকে ৯০ গুণ বেশি ঘন। এরও কোন প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেই। পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৪০০° সেলসিয়াস হওয়ায় এটি সৌরজগতের সবচেয়ে উত্তপ্ত। বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউজ গ্যাস থাকার কারণেই এর তাপমাত্রা এতো বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে কোন ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া সংঘটিত হয় বলে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য পুরুত্বের বায়ুমণ্ডল ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় চৌম্বক ক্ষেত্র নেই তার। এ থেকে বোঝা যায়, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে এর বায়ুমণ্ডল নিয়মিত পূর্ণ হতে থাকে। এর ফলে চৌম্বক ক্ষেত্রের অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠা যায়।
পৃথিবী
পৃথিবী সৌরজগতের ভেতরের অংশের সবচেয়ে ঘন ও বড় গ্রহ। এটিই এ অঞ্চলের একমাত্র গ্রহ যাতে বর্তমানেও ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে। এটা আমাদের জানা একমাত্র গ্রহ যাতে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। এর তরল জলমণ্ডল সৌরজগতের ভেতরের অংশে অনন্য। এটিই একমাত্র গ্রহ যাতে গ্রহ টেকটোনিক পর্যবেক্ষন করা গেছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অন্যান্য যেকোন গ্রহ থেকে অনেক ভিন্ন। এখানে শতকরা ২১ ভাগ অক্সিজেন থাকার কারণেই জীবনের বিকাশ ঘটা সম্ভব হয়েছে। এর একটি মাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ আছে যার নাম চাঁদ বা 'মুন'। সৌরজগতের অন্য কোন পার্থিব গ্রহের এত বড় উপগ্রহ নেই।
মঙ্গল
মঙ্গল গ্রহ পৃথিবী ও শুক্রের চেয়ে ছোট (.১০৭ পার্থিব ভর)। এর একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল আছে যা মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে গঠিত। পৃষ্ঠতলে প্রচুর সংখ্যক আগ্নেয়গিরি (যেমন অলিম্পাস মন্স) ও ফাটল উপত্যকায় (যেমন ভ্যালিস মেরিনারিস) পরিপূর্ণ। এ থেকে বোঝা যায় এর ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া খুব বেশি দিন আগে থেমে যায়নি। লৌহ সমৃদ্ধ মাটিতে মরিচা পড়ার কারণেই গ্রহটির রং লাল। মঙ্গলের দুটি ছোট ছোট উপগ্রহ আছে যাদের নাম ডিমোস এবং ফোবোস। ধারণা করা হয়, মঙ্গল অনেক আগে কোন গ্রহাণুকে নিজ মহাকর্ষের বন্ধনে বেঁধে ফেলেছিল এবং এভাবেই উপগ্রহগুলোর সৃষ্টি হয়।
গ্রহাণু বেষ্টনী সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: গ্রহাণু বেষ্টনী
গ্রহাণুগুলো মূলত খুব ছোট ছোট সৌর জাগতিক বস্তু যেগুলো ধাতব পাথুরে খনিজ পদার্থ দিয়ে গঠিত। এই খনিজ পদার্থগুলো অনুদ্বায়ী।
মূল গ্রহাণু বেষ্টনীটি মূলত একটি কক্ষপথ যা পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। সূর্য থেকে এই বেষ্টনীর নিকটবিন্দু এবং দূরবিন্দুর দূরত্ব যথাক্রমে ২.৩ এইউ এবং ৩.৩ এইউ। ধারণা করা হয়, সৌরজগতের গঠনকালীন সময়ে বৃহস্পতি গ্রহের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণে যে বস্তুগুলো একসাথে মিলে বড় কোন বস্তুতে পরিণত হতে পারেনি সেগুলোই এই বেষ্টনীতে আশ্রয় নিয়েছে।
গ্রহাণুর আকার বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কয়েক শত কিলোমিটামূল গ্রহাণু বেষ্টনীটি মূলত একটি কক্ষপথ যা পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। সূর্য থেকে এই বেষ্টনীর নিকটবিন্দু এবং দূরবিন্দুর দূরত্ব যথাক্রমে ২.৩ এইউ এবং ৩.৩ এইউ। ধারণা করা হয়, সৌরজগতের গঠনকালীন সময়ে বৃহস্পতি গ্রহের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণে যে বস্তুগুলো একসাথে মিলে বড় কোন বস্তুতে পরিণত হতে পারেনি সেগুলোই এই বেষ্টনীতে আশ্রয় নিয়েছে।
গ্রহাণুর আকার বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কয়েক শত কিলোমিটার থেকে শুরু করে এদের ব্যাসার্ধ্য আণুবীক্ষণিকও হতে পারে। বৃহত্তম গ্রহাণু সেরেস ছাড়া বাকি সবগুলো গ্রহাণুই "ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তু" শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। অবশ্য ৪ ভেস্তা ও ১০ হাইজিয়া নামক গ্রহাণু দুটি ভবিষ্যতে বামন গ্রহ শ্রেণীতে জায়গা করে নিতে পারে। তরলস্থৈতিক সাম্যাবস্থা অর্জনে সমর্থ হলেই কেবল বামন গ্রহের কাতারে দাড়াতে পারবে তারা।
গ্রহাণু বেষ্টনীতে দশ-বিশ হাজার বস্তু আছে যেগুলোর ব্যাস এক কিলোমিটারের উপরে। এই সংখ্যা কয়েক মিলিয়নও হতে পারে। তারপরও সমগ্র গ্রহাণু বেষ্টনীর ভর পৃথিবীর ভরের হাজার ভাগের এক ভাগ থেকে সামান্য বেশী। বেষ্টনীতে গ্রহাণুগুলো খুব একটা ঘন সন্নিবেশিত নয়। পৃথিবী থেকে প্রেরিত নভোযানগুলো কোন রকমের দুর্ঘটনা ছাড়াই নিয়মিত এই বেষ্টনী অতিক্রম করে থাকে। যে গ্রহাণুগুলোর ব্যাস ১০ থেকে ১০৪ মিটারের মধ্যে সেগুলোকে উল্কা বলা হয়।
সেরেস
সেরেস গ্রহাণু বেষ্টনীর বৃহত্তম বস্তু। একে বামন গ্রহ শ্রেণীর মধ্যে ফেলা হয়েছে। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ২.৭৭ এইউ এবং এর ব্যাস ১০০০ কিলোমিটার থেকে সামান্য কম। নিজস্ব অভিকর্ষের মাধ্যমে গোলকীয় আকৃতি লাভ করার জন্য এই ব্যাস যথেষ্টই বেশি। ঊনবিংশ শতকে যখন এটি আবিষ্কৃত হয় তখন সবাই গ্রহ বলে ধরে নিয়েছিল। কিন্তু আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের পর প্রতিবেশে অন্যান্য গ্রহাণু আবিষ্কৃত হওয়ায় ১৮৫০-এর দশকে গ্রহাণু হিসেবে চিহ্নিত হয়। আর ২০০৬ সালে এসে একে বামন গ্রহ হিসেবে পুনরায় শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
গ্রহাণু শ্রেণী
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে এই বেষ্টনীর গ্রহাণুগুলোকে গ্রহাণু শ্রেণী এবং পরিবারে বিভক্ত করা হয়। যে গ্রহাণুগুলো অপেক্ষাকৃত বড় গ্রহাণুকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে সেগুলোকে গ্রহাণু চাঁদ বলা হয়। এই চাঁদগুলো অবশ্য মোটেই গ্রহীয় চাঁদের মত নয়। কোন কোন গ্রহাণু চাঁদ আকারে তার মাতৃ গ্রহাণুর প্রায় সমান। গ্রহাণু বেষ্টনীতে মূল-বেষ্টনী ধূমকেতুও থাকে। ধারণা করা হয়, এই ধূমকেতুগুলোই পৃথিবীতে পানির উৎস হিসেবে কাজ করেছিল।
বৃহস্পতি গ্রহের এল৪ ও এল৫ বিন্দুগুলোর যেকোনটিতে ট্রোজান গ্রহাণুদের বাস। এই বিন্দুগুলো হল মহাকর্ষীয়ভাবে স্থিতিশীল অঞ্চল যারা কোন গ্রহের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় বা কক্ষপথে গ্রহটিকে অনুসরণ করে চলে। অন্য যেকোন গ্রহ বা উপগ্রহের ল্যাগ্রেঞ্জ বিন্দুতে অবস্থিত ছোটখট বস্তু বোঝাতেও কখনও কখনও "ট্রোজান" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। হিলডা গ্রহাণুসমূহ বৃহস্পতির সাথে ২:৩ রেজোন্যান্সে অবস্থান করছে। অর্থাৎ তারা বৃহস্পতিকে যে সময়ে ২ বার আবর্তন করে সে সময়ে সূর্যকে ৩ বার আবর্তন করে।
এছাড়াও সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগে প্রচুর রুজ গ্রহাণু আছে। এই গ্রহাণুর অনেকগুলোই অভ্যন্তরভাগের গ্রহগুলোর কক্ষপথকে অতিক্রম করে যায়। মধ্য সৌরজগৎ সম্পাদনা
মধ্য সৌরজগতের প্রধান বস্তু হল বিশাল বিশাল সব গ্যাস দানব এবং তাদের ছোটোখাটো গ্রহ আকৃতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ। অনেক স্বল্পকালীন ধূমকেতু যেমন সেন্টাউর ও এই অঞ্চলে অবস্থান করে। অঞ্চলটির কোন প্রথাগত নাম নেই। অনেক সময় অবশ্য বহিঃসৌরজগৎ নামে ডাকা হয়। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক সময়ে বহিঃসৌরজগৎ বলতে নেপচুনের পরের অঞ্চলটিকে বোঝায়। মধ্য অঞ্চলে যে কঠিন বস্তুগুলো রয়েছে সেগুলো অভ্যন্তরভাগের মত পাথুরে বস্তু দ্বারা গঠিত নয়। এগুলোর মূল গাঠনিক উপাদান হল বরফ যা পানি, অ্যামোনিয়া বা মিথেন জমাট বেঁধে তৈরি হতে পারে।
বহিঃস্থ গ্রহসমূহ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: গ্যাস দানব
সৌরজগতের বাইরের দিকে অবস্থিত চারটি গ্রহকে গ্যাস দানব বলা হয়। মাঝেমাঝে এদেরকে জোভিয়ান গ্রহ নামেও ডাকতে দেখা যায়। সূর্যকে আবর্তনরত সকল বস্তুর সম্মিলিত ভরের শতকরা ৯৯ ভাগের জন্যই দায়ী এই বহিঃস্থ গ্রহগুলো। বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম আছে। সেখানকার বায়ুমণ্ডল মূলত এই দুটি মৌল দিয়েই গঠিত। নেপচুন ও ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডলে বরফের পরিমাণ অনেক বেশি। এই বরফও পানি অ্যামোনিয়া বা মিথেন জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রহ দুটিকে সম্পূর্ণ নতুন একটি গ্রহ শ্রেণীতে ফেলা যায় যে শ্রেণীর নাম হবে "বরফ দানব"। চার দানবেরই নিজস্ব বলয় আছে। কিন্তু শুধু শনির বলয়ই পৃথিবী থেকে দেখা যায়। বহিঃস্থ গ্রহকে আবার উৎকৃষ্ট গ্রহের সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে অবস্থিত গ্রহগুলোকেই উৎকৃষ্ট গ্রহ নামে ডাকা হয়।
বৃহস্পতি
বৃহস্পতি গ্রহের ভর পৃথিবীর ৩১৮ গুণ এবং সবগুলো বহিঃস্থ গ্রহের সম্মলিত ভরের তুলনায়ও সে ২.৫ গুণ ভারী। গ্রহটি মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দিয়ে গঠিত। তীব্র অভ্যন্তরীন তাপের কারণে এর বায়ুমণ্ডলে বেশ কিছু অর্ধ-স্থায়ী বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয় যার মধ্যে আছে মেঘের ব্যান্ড ও বিরাট লোহিত কলঙ্ক। আমাদের জানামতে এই গ্রহের ৬৭টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ আছে। চারটি বড় বড় উপগ্রহ গ্যানিমেড, ক্যালিস্টো, আইও এবং ইউরোপা অনেকটা পার্থিব গ্রহগুলোর মত। কারণ এই উপগ্রহগুলোতে অগ্ন্যুৎপাত ও অভ্যন্তরীন তাপ বৃদ্ধির মত ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। সৌরজগতের বৃহত্তম উপগ্রহ গ্যানিমেডের আকার বুধ গ্রহ থেকেও বড়।
শনি
শনি গ্রহ দৃষ্টিনন্দন বলয়ের জন্য সবার কাছেই বেশ পরিচিত। বায়ুমণ্ডলের গঠনসহ বেশ কটি দিক দিয়ে এর সাথে বৃহস্পতির সাদৃশ্য আছে। অবশ্য শনি বৃহস্পতির মত অতো বড় না। এর ভর পৃথিবীর মাত্র ৯৫ গুণ। শনির ৬২টি জানা উপগ্রহের মধ্যে দুটিতে বর্তমানেও ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া শনির আরও তিনটি উপগ্রহ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। টাইটান ও এনসেল্যাডাস উপগ্রহ দুটিতে ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটলেও সেগুলোর মূল গাঠনিক উপাদান আসলে বরফ। টাইটান বুধের চেয়ে বড় এবং এটি সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যাতে উল্লেখযোগ্য পুরুত্বের বায়ুমণ্ডল আছে।
ইউরেনাস
ইউরেনাসের ভর পৃথিবীর ১৪ গুণ। কিন্তু বহিঃস্থ গ্রহগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে হালকা। এই গ্রহের নিজ অক্ষের চারদিকে পরিভ্রমণ অক্ষ সূর্যের চারদিকে আবর্তন অক্ষের প্রায় সমতলে অবস্থিত। এ কারণে সেখানে কোন ঋতু পরিবর্তন ঘটে না। এর অ্যাক্সিয়াল টিল্ট ও ভূকক্ষের মধ্যবর্তী কোণ ৯০°'র চেয়ে বেশি। অন্যান্য গ্যাস দানবের চেয়ে এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা কম বলে সে মহাকাশে তুলনামূলকভাবে কম তাপ বিকিরণ করে। এর জানা উপগ্রহের সংখ্যা ২৭টি। এর মধ্যে বড় উপগ্রহগুলি হচ্ছে টাইটানিয়া, ওবেরন, আমব্রিয়েল, এরিয়েল ও মিরান্ডা।
নেপচুন
নেপচুনের আকার ইউরেনাসের চেয়ে কম হলেও ভর তার থকে বেশি। ইউরেনাসের ভর পৃথিবীর ১৪ গুণ আর নেপচুনের ভর ১৭ গুণ। এ কারণে নেপচুনের ঘনত্ব তুলনামূলক বেশি। এটি তুলনামূলক বেশি তাপ বিকিরণ করে তবে এই বিকিরণের পরিমাণ বৃহস্পতি বা শনির থেকে কম। নেপচুনের জানা উপগ্রহের সংখ্যা ১৪। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রাইটন ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয়। এই উপগ্রহে উষ্ণ প্রস্রবণ ও তরল নাইট্রোজেন আছে। ট্রাইটন একমাত্র বড় উপগ্রহ যার প্রতীপ কক্ষপথ আছে। নেপচুনের কক্ষপথে বেশ কিছু ক্ষুদ্র গ্রহ আছে যেগুলোকে নেপচুন ট্রোজান বলে। এই ট্রোজানগুলো মাতৃ গ্রহের সাথে ১:১ রেজোন্যান্সে আবর্তন করে।
ধূমকেতু সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: ধূমকেতু
ধূমকেতু বেশ ছোট সৌর জাগতিক বস্তু। মূলত উদ্বায়ী বরফ দ্বারা গঠিত এই বস্তুগুলোর ব্যাস হয় সাধারণত কয়েক কিলোমিটার। এরা অতি মাত্রায় উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথে আবর্তন করে; অনুসূর বিন্দু সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগের গ্রহগুলোর কক্ষপথের চেয়ে কাছে আবার অপসূর প্লুটোর কক্ষপথেরও বাইরে। ধূমকেতু যখন সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করে তখন সূর্যের খুব কাছে এসে যাওয়ার কারণে এর বরফসমৃদ্ধ পৃষ্ঠতল আয়নিত ও উর্ধ্বপাতিত হয়ে একটি লেজ গঠন করে। গ্ধূমকেতু বেশ ছোট সৌর জাগতিক বস্তু। মূলত উদ্বায়ী বরফ দ্বারা গঠিত এই বস্তুগুলোর ব্যাস হয় সাধারণত কয়েক কিলোমিটার। এরা অতি মাত্রায় উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথে আবর্তন করে; অনুসূর বিন্দু সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগের গ্রহগুলোর কক্ষপথের চেয়ে কাছে আবার অপসূর প্লুটোর কক্ষপথেরও বাইরে। ধূমকেতু যখন সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করে তখন সূর্যের খুব কাছে এসে যাওয়ার কারণে এর বরফসমৃদ্ধ পৃষ্ঠতল আয়নিত ও উর্ধ্বপাতিত হয়ে একটি লেজ গঠন করে। গ্যাস আর ধূলি দিয়ে গঠিত এই লেজটি পৃথিবী থেকে মাঝে মাঝে খালি চোখেও দেখা যায়।
স্বল্প-পর্যায়ের ধূমকেতুগুলো একবার তার কক্ষপথে আবর্তন করতে ২০০ বছরেরও কম সময় নিতে পারে। অন্য দিকে দীর্ঘ-পর্যায়ের ধূমকেতুর কক্ষপথ আবর্তনের সময় হাজার হাজার বছরও হয়ে থাকে। স্বল্প পর্যায়ের ধূমকেতুর জন্ম হয় কাইপার বেষ্টনীতে আর দীর্ঘ-পর্যায়ের ধূমকেতুরা (যেমন, হেল-বপ ধূমকেতু) জন্ম নেয় উওর্ট মেঘে। অনেক ধূমকেতু দলই একটি মাতৃ ধূমকেতু ভেঙে উৎপত্তি লাভ করেছে। যেমন, Kreutz Sungrazers ধূমকেতু দল। বেশ কিছু অধিবৃত্তীয় কক্ষপথবিশিষ্ট ধূমকেতু সৌরজগতের বাইরেও সৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য এই ধূমকেতুগুলোর কক্ষপথ সঠিকভাবে নির্ণয় করা বেশ কষ্টকর। প্রবীণ ধূমকেতু, সৌরবায়ুর কারণে যাদের লেজের অধিকাংশই মহাকাশে বিলীন হয়ে গেছে, তাদেরকে কখনও কখনও গ্রহাণু ধরা হয়।
সেন্টাউর
সেন্টাউর ৯ থেকে ৩০ জ্যোতির্বিজ্ঞান একক দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত বরফসমৃদ্ধ বস্তু যেগুলো অনেকটাই ধূমকেতুর মত। বৃহস্পতি ও নেপচুনের মাঝামাঝি একটি অঞ্চলে থেকে তারা সূর্যকে আবর্তন করে। এখন পর্যন্ত জানা সর্ববৃহৎ সেন্টাউর হচ্ছে ১০১৯৯ ক্যারিক্লো যার ব্যাস ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত সেন্টাউরের নাম ২০৬০ কাইরন যাকে ধূমকেতু বলা হয়। কারণ ধূমকেতুর মতই এর একটি লেজ আছে। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই সেন্টাউরকে ভেতরের দিকে বিক্ষিপ্ত কাইপার বেষ্টনী বস্তু নামে আখ্যায়িত করেন। বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত কাইপার বেষ্টনী বস্তুও রয়েছে যেগুলো বিক্ষিপ্ত চাকতির মধ্যে অবস্থান করে।
সূর্য ও এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু
সৌর জগতের প্রধান বস্তুসমূহ (স্কেল অনুযায়ী নয়; বাম থেকে ডানে): প্লুটো, নেপচুন, ইউরেনাস, শনি, বৃহস্পতি, গ্রহাণু বেষ্টনী, সূর্য, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, চাঁদ এবং মঙ্গল। একেবারে বামে একটি ধূমকেতুও দেখা যাচ্ছে।
সৌরজগৎ বলতে সূর্য এবং এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুকে বোঝায়। এর মধ্যে আছে: আটটি গ্রহ, তাদের ১৭৩টি জানা প্রাকৃতিক উপগ্রহ, কিছু বামন গ্রহ ও তাদের চারটি কিছু প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং কোটি কোটি ক্ষুদ্র বস্তু।[১] শেষোক্ত শ্রেণীর মধ্যে আছে গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু এবং আন্তঃগ্রহীয় ধূলি মেঘ। মৌলিক ব্যাখ্যা অনুসারে সৌর জগতের মধ্যে অবস্থান করছে: সূর্য (জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রতীক ), চারটি পার্থিব গ্রহ, একটি গ্রহাণু বেষ্টনী যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথুরে বস্তু দ্বারা গঠিত, চারটি গ্যাসীয় দৈত্য এবং একটি দ্বিতীয় বেষ্টনী যা কাইপার বেষ্টনী নামে পরিচিত, এতে বরফ শীতল পদার্থ রয়েছে। কাইপার বেষ্টনীর পরে রয়েছে বিক্ষিপ্ত বস্তুসমূহ, হেলিওপজ এবং সবশেষে উওর্ট মেঘ। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে গ্রহগুলো হল: বুধ (), শুক্র (), পৃথিবী (), মঙ্গল (), বৃহস্পতি (), শনি (), ইউরেনাস (), এবং নেপচুন ()। আটটির মধ্যে ছয়টি গ্রহের নিজস্ব প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে। গ্যাসীয় দানবের প্রত্যেকটির চারদিকে আবার গ্রহীয় বলয় রয়েছে যা ধূলিকণা ও অন্যান্য কণা দ্বারা গঠিত। পৃথিবী ব্যতীত সব গ্রহের ইংরেজি নাম বিভিন্ন গ্রিক দেবতাদের নামে রাখা হয়েছে। তিনটি বামন গ্রহ হচ্ছে: প্লুটো (), কাইপার বেষ্টনীর বৃহত্তম বস্তু, সেরেস (), গ্রহাণু বেষ্টনীর বৃহত্তম বস্তু, এবং এরিস, যা বিক্ষিপ্ত চাকতির মধ্যে অবস্থান করে। অভ্যন্তরভাগের গ্রহসমূহ সম্পাদনা
পার্থিব গ্রহ
ভেতরের অংশে মোট চারটি গ্রহ আছে যেগুলোকে পার্থিব গ্রহ বলা হয়। এই গ্রহগুলো খুব ঘন এবং এগুলোর গাঠনিক উপাদান পাথুরে। এগুলোর উপগ্রহের সংখ্যা খুবই কম, কোন কোনটির উপগ্রহই নেই। এছাড়া এগুলোর চারদিকে কোন বলয়ও নেই। এদের গাঠনিক উপাদান মূলত বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যাদের গলনাঙ্ক খুব বেশি। যেমন, তাদের ভূত্বক ও ম্যান্ট্ল সিলিকেট দ্বারা গঠিত এবং কেন্দ্র গঠিত লৌহ ও এ ধরনের অন্যান্য ধাতু দ্বারা। চারটির মধ্যে তিনটি গ্রহের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বায়ুমণ্ডল আছে। এই গ্রহ তিনটি হল শুক্র, মঙ্গল এবং পৃথিবী। আর সবগুলোরই সংঘর্ষ খাদ এবং ফাটল উপত্যকা ও আগ্নেয়গিরির মত টেকটোনিক পৃষ্ঠতলীয় কাঠামো আছে। ভেতরের দিকের গ্রহগুলোর সাথে নগণ্য গ্রহগুলোকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। যে গ্রহগুলো থেকে সূর্যের দূরত্ব পৃথিবীর চেয়ে কম সেগুলোকে নগণ্য গ্রহ বলে। বুধ এবং শুক্র নগণ্য গ্রহ।
বুধ গ্রহ
বুধ গ্রহ সূর্যের সবচেয়ে কাছে (০.৪ এইউ) এবং এটি সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম (০.৫৫ পার্থিব ভর) গ্রহ। এর কোন প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেই। সংঘর্ষ খাদ ছাড়া এর একমাত্র জানা ভৌগোলিক ফিচার হচ্ছে লতিযুক্ত রিজ বা rupe। ইতিহাসের প্রথম দিকে যখন গ্রহের সংকোচন চলছিল তখন এগুলো সৃষ্টি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। বুধের বায়ুমণ্ডল অতি নগণ্য যার প্রধান উপাদান সৌরবায়ুর প্রভাবে পৃষ্ঠ থেকে সজোরে উৎক্ষিপ্ত পরমাণু। এর তুলনামূলক বড় লৌহ কেন্দ্র এবং সরু ম্যান্ট্লের ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন অনুকল্পে বলা হয়েছে, একটি বড় সংঘর্ষের মাধ্যমে গ্রহটির বহিস্তর ছিন্নভিন্ন হয়ে মহাকাশে বিলীন হয়ে গেছে এবং নিকটবর্তী সূর্যের শক্তির প্রভাবে এর কোন বিবৃদ্ধিও ঘটেনি।
শুক্র গ্রহ
শুক্র গ্রহের আকার (০.৮১৫ পার্থিব ভর) প্রায় পৃথিবীর সমান এবং সূর্য থেকে এর দূরত্ব ০.৭ এইউ। পৃথিবীর মতই এই গ্রহের ম্যান্ট্ল সিলিকেট দ্বারা এবং কেন্দ্রভাগ লৌহ দ্বারা গঠিত। এর বায়ুমণ্ডল বেশ পুরু এবং এর ভেতরের অংশে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অবশ্য গ্রহটি পৃথিবীর তুলনায় অনেক শুষ্ক এবং এর বায়ুমণ্ডল আমাদের থেকে ৯০ গুণ বেশি ঘন। এরও কোন প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেই। পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৪০০° সেলসিয়াস হওয়ায় এটি সৌরজগতের সবচেয়ে উত্তপ্ত। বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউজ গ্যাস থাকার কারণেই এর তাপমাত্রা এতো বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে কোন ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া সংঘটিত হয় বলে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য পুরুত্বের বায়ুমণ্ডল ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় চৌম্বক ক্ষেত্র নেই তার। এ থেকে বোঝা যায়, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে এর বায়ুমণ্ডল নিয়মিত পূর্ণ হতে থাকে। এর ফলে চৌম্বক ক্ষেত্রের অপ্রতুলতা কাটিয়ে উঠা যায়।
পৃথিবী
পৃথিবী সৌরজগতের ভেতরের অংশের সবচেয়ে ঘন ও বড় গ্রহ। এটিই এ অঞ্চলের একমাত্র গ্রহ যাতে বর্তমানেও ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে। এটা আমাদের জানা একমাত্র গ্রহ যাতে জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। এর তরল জলমণ্ডল সৌরজগতের ভেতরের অংশে অনন্য। এটিই একমাত্র গ্রহ যাতে গ্রহ টেকটোনিক পর্যবেক্ষন করা গেছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল অন্যান্য যেকোন গ্রহ থেকে অনেক ভিন্ন। এখানে শতকরা ২১ ভাগ অক্সিজেন থাকার কারণেই জীবনের বিকাশ ঘটা সম্ভব হয়েছে। এর একটি মাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ আছে যার নাম চাঁদ বা 'মুন'। সৌরজগতের অন্য কোন পার্থিব গ্রহের এত বড় উপগ্রহ নেই।
মঙ্গল
মঙ্গল গ্রহ পৃথিবী ও শুক্রের চেয়ে ছোট (.১০৭ পার্থিব ভর)। এর একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল আছে যা মূলত কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে গঠিত। পৃষ্ঠতলে প্রচুর সংখ্যক আগ্নেয়গিরি (যেমন অলিম্পাস মন্স) ও ফাটল উপত্যকায় (যেমন ভ্যালিস মেরিনারিস) পরিপূর্ণ। এ থেকে বোঝা যায় এর ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া খুব বেশি দিন আগে থেমে যায়নি। লৌহ সমৃদ্ধ মাটিতে মরিচা পড়ার কারণেই গ্রহটির রং লাল। মঙ্গলের দুটি ছোট ছোট উপগ্রহ আছে যাদের নাম ডিমোস এবং ফোবোস। ধারণা করা হয়, মঙ্গল অনেক আগে কোন গ্রহাণুকে নিজ মহাকর্ষের বন্ধনে বেঁধে ফেলেছিল এবং এভাবেই উপগ্রহগুলোর সৃষ্টি হয়।
গ্রহাণু বেষ্টনী সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: গ্রহাণু বেষ্টনী
গ্রহাণুগুলো মূলত খুব ছোট ছোট সৌর জাগতিক বস্তু যেগুলো ধাতব পাথুরে খনিজ পদার্থ দিয়ে গঠিত। এই খনিজ পদার্থগুলো অনুদ্বায়ী।
মূল গ্রহাণু বেষ্টনীটি মূলত একটি কক্ষপথ যা পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। সূর্য থেকে এই বেষ্টনীর নিকটবিন্দু এবং দূরবিন্দুর দূরত্ব যথাক্রমে ২.৩ এইউ এবং ৩.৩ এইউ। ধারণা করা হয়, সৌরজগতের গঠনকালীন সময়ে বৃহস্পতি গ্রহের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণে যে বস্তুগুলো একসাথে মিলে বড় কোন বস্তুতে পরিণত হতে পারেনি সেগুলোই এই বেষ্টনীতে আশ্রয় নিয়েছে।
গ্রহাণুর আকার বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কয়েক শত কিলোমিটামূল গ্রহাণু বেষ্টনীটি মূলত একটি কক্ষপথ যা পৃথিবী এবং মঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। সূর্য থেকে এই বেষ্টনীর নিকটবিন্দু এবং দূরবিন্দুর দূরত্ব যথাক্রমে ২.৩ এইউ এবং ৩.৩ এইউ। ধারণা করা হয়, সৌরজগতের গঠনকালীন সময়ে বৃহস্পতি গ্রহের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণে যে বস্তুগুলো একসাথে মিলে বড় কোন বস্তুতে পরিণত হতে পারেনি সেগুলোই এই বেষ্টনীতে আশ্রয় নিয়েছে।
গ্রহাণুর আকার বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কয়েক শত কিলোমিটার থেকে শুরু করে এদের ব্যাসার্ধ্য আণুবীক্ষণিকও হতে পারে। বৃহত্তম গ্রহাণু সেরেস ছাড়া বাকি সবগুলো গ্রহাণুই "ক্ষুদ্র সৌর জাগতিক বস্তু" শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। অবশ্য ৪ ভেস্তা ও ১০ হাইজিয়া নামক গ্রহাণু দুটি ভবিষ্যতে বামন গ্রহ শ্রেণীতে জায়গা করে নিতে পারে। তরলস্থৈতিক সাম্যাবস্থা অর্জনে সমর্থ হলেই কেবল বামন গ্রহের কাতারে দাড়াতে পারবে তারা।
গ্রহাণু বেষ্টনীতে দশ-বিশ হাজার বস্তু আছে যেগুলোর ব্যাস এক কিলোমিটারের উপরে। এই সংখ্যা কয়েক মিলিয়নও হতে পারে। তারপরও সমগ্র গ্রহাণু বেষ্টনীর ভর পৃথিবীর ভরের হাজার ভাগের এক ভাগ থেকে সামান্য বেশী। বেষ্টনীতে গ্রহাণুগুলো খুব একটা ঘন সন্নিবেশিত নয়। পৃথিবী থেকে প্রেরিত নভোযানগুলো কোন রকমের দুর্ঘটনা ছাড়াই নিয়মিত এই বেষ্টনী অতিক্রম করে থাকে। যে গ্রহাণুগুলোর ব্যাস ১০ থেকে ১০৪ মিটারের মধ্যে সেগুলোকে উল্কা বলা হয়।
সেরেস
সেরেস গ্রহাণু বেষ্টনীর বৃহত্তম বস্তু। একে বামন গ্রহ শ্রেণীর মধ্যে ফেলা হয়েছে। সূর্য থেকে এর দূরত্ব ২.৭৭ এইউ এবং এর ব্যাস ১০০০ কিলোমিটার থেকে সামান্য কম। নিজস্ব অভিকর্ষের মাধ্যমে গোলকীয় আকৃতি লাভ করার জন্য এই ব্যাস যথেষ্টই বেশি। ঊনবিংশ শতকে যখন এটি আবিষ্কৃত হয় তখন সবাই গ্রহ বলে ধরে নিয়েছিল। কিন্তু আরও বিস্তারিত পর্যবেক্ষণের পর প্রতিবেশে অন্যান্য গ্রহাণু আবিষ্কৃত হওয়ায় ১৮৫০-এর দশকে গ্রহাণু হিসেবে চিহ্নিত হয়। আর ২০০৬ সালে এসে একে বামন গ্রহ হিসেবে পুনরায় শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
গ্রহাণু শ্রেণী
কক্ষপথের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে এই বেষ্টনীর গ্রহাণুগুলোকে গ্রহাণু শ্রেণী এবং পরিবারে বিভক্ত করা হয়। যে গ্রহাণুগুলো অপেক্ষাকৃত বড় গ্রহাণুকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে সেগুলোকে গ্রহাণু চাঁদ বলা হয়। এই চাঁদগুলো অবশ্য মোটেই গ্রহীয় চাঁদের মত নয়। কোন কোন গ্রহাণু চাঁদ আকারে তার মাতৃ গ্রহাণুর প্রায় সমান। গ্রহাণু বেষ্টনীতে মূল-বেষ্টনী ধূমকেতুও থাকে। ধারণা করা হয়, এই ধূমকেতুগুলোই পৃথিবীতে পানির উৎস হিসেবে কাজ করেছিল।
বৃহস্পতি গ্রহের এল৪ ও এল৫ বিন্দুগুলোর যেকোনটিতে ট্রোজান গ্রহাণুদের বাস। এই বিন্দুগুলো হল মহাকর্ষীয়ভাবে স্থিতিশীল অঞ্চল যারা কোন গ্রহের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় বা কক্ষপথে গ্রহটিকে অনুসরণ করে চলে। অন্য যেকোন গ্রহ বা উপগ্রহের ল্যাগ্রেঞ্জ বিন্দুতে অবস্থিত ছোটখট বস্তু বোঝাতেও কখনও কখনও "ট্রোজান" শব্দটি ব্যবহৃত হয়। হিলডা গ্রহাণুসমূহ বৃহস্পতির সাথে ২:৩ রেজোন্যান্সে অবস্থান করছে। অর্থাৎ তারা বৃহস্পতিকে যে সময়ে ২ বার আবর্তন করে সে সময়ে সূর্যকে ৩ বার আবর্তন করে।
এছাড়াও সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগে প্রচুর রুজ গ্রহাণু আছে। এই গ্রহাণুর অনেকগুলোই অভ্যন্তরভাগের গ্রহগুলোর কক্ষপথকে অতিক্রম করে যায়। মধ্য সৌরজগৎ সম্পাদনা
মধ্য সৌরজগতের প্রধান বস্তু হল বিশাল বিশাল সব গ্যাস দানব এবং তাদের ছোটোখাটো গ্রহ আকৃতির প্রাকৃতিক উপগ্রহ। অনেক স্বল্পকালীন ধূমকেতু যেমন সেন্টাউর ও এই অঞ্চলে অবস্থান করে। অঞ্চলটির কোন প্রথাগত নাম নেই। অনেক সময় অবশ্য বহিঃসৌরজগৎ নামে ডাকা হয়। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক সময়ে বহিঃসৌরজগৎ বলতে নেপচুনের পরের অঞ্চলটিকে বোঝায়। মধ্য অঞ্চলে যে কঠিন বস্তুগুলো রয়েছে সেগুলো অভ্যন্তরভাগের মত পাথুরে বস্তু দ্বারা গঠিত নয়। এগুলোর মূল গাঠনিক উপাদান হল বরফ যা পানি, অ্যামোনিয়া বা মিথেন জমাট বেঁধে তৈরি হতে পারে।
বহিঃস্থ গ্রহসমূহ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: গ্যাস দানব
সৌরজগতের বাইরের দিকে অবস্থিত চারটি গ্রহকে গ্যাস দানব বলা হয়। মাঝেমাঝে এদেরকে জোভিয়ান গ্রহ নামেও ডাকতে দেখা যায়। সূর্যকে আবর্তনরত সকল বস্তুর সম্মিলিত ভরের শতকরা ৯৯ ভাগের জন্যই দায়ী এই বহিঃস্থ গ্রহগুলো। বৃহস্পতি ও শনি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণ হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম আছে। সেখানকার বায়ুমণ্ডল মূলত এই দুটি মৌল দিয়েই গঠিত। নেপচুন ও ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডলে বরফের পরিমাণ অনেক বেশি। এই বরফও পানি অ্যামোনিয়া বা মিথেন জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে এই গ্রহ দুটিকে সম্পূর্ণ নতুন একটি গ্রহ শ্রেণীতে ফেলা যায় যে শ্রেণীর নাম হবে "বরফ দানব"। চার দানবেরই নিজস্ব বলয় আছে। কিন্তু শুধু শনির বলয়ই পৃথিবী থেকে দেখা যায়। বহিঃস্থ গ্রহকে আবার উৎকৃষ্ট গ্রহের সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে অবস্থিত গ্রহগুলোকেই উৎকৃষ্ট গ্রহ নামে ডাকা হয়।
বৃহস্পতি
বৃহস্পতি গ্রহের ভর পৃথিবীর ৩১৮ গুণ এবং সবগুলো বহিঃস্থ গ্রহের সম্মলিত ভরের তুলনায়ও সে ২.৫ গুণ ভারী। গ্রহটি মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দিয়ে গঠিত। তীব্র অভ্যন্তরীন তাপের কারণে এর বায়ুমণ্ডলে বেশ কিছু অর্ধ-স্থায়ী বৈশিষ্ট্যের সৃষ্টি হয় যার মধ্যে আছে মেঘের ব্যান্ড ও বিরাট লোহিত কলঙ্ক। আমাদের জানামতে এই গ্রহের ৬৭টি প্রাকৃতিক উপগ্রহ আছে। চারটি বড় বড় উপগ্রহ গ্যানিমেড, ক্যালিস্টো, আইও এবং ইউরোপা অনেকটা পার্থিব গ্রহগুলোর মত। কারণ এই উপগ্রহগুলোতে অগ্ন্যুৎপাত ও অভ্যন্তরীন তাপ বৃদ্ধির মত ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। সৌরজগতের বৃহত্তম উপগ্রহ গ্যানিমেডের আকার বুধ গ্রহ থেকেও বড়।
শনি
শনি গ্রহ দৃষ্টিনন্দন বলয়ের জন্য সবার কাছেই বেশ পরিচিত। বায়ুমণ্ডলের গঠনসহ বেশ কটি দিক দিয়ে এর সাথে বৃহস্পতির সাদৃশ্য আছে। অবশ্য শনি বৃহস্পতির মত অতো বড় না। এর ভর পৃথিবীর মাত্র ৯৫ গুণ। শনির ৬২টি জানা উপগ্রহের মধ্যে দুটিতে বর্তমানেও ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলছে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া শনির আরও তিনটি উপগ্রহ আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। টাইটান ও এনসেল্যাডাস উপগ্রহ দুটিতে ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটলেও সেগুলোর মূল গাঠনিক উপাদান আসলে বরফ। টাইটান বুধের চেয়ে বড় এবং এটি সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যাতে উল্লেখযোগ্য পুরুত্বের বায়ুমণ্ডল আছে।
ইউরেনাস
ইউরেনাসের ভর পৃথিবীর ১৪ গুণ। কিন্তু বহিঃস্থ গ্রহগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে হালকা। এই গ্রহের নিজ অক্ষের চারদিকে পরিভ্রমণ অক্ষ সূর্যের চারদিকে আবর্তন অক্ষের প্রায় সমতলে অবস্থিত। এ কারণে সেখানে কোন ঋতু পরিবর্তন ঘটে না। এর অ্যাক্সিয়াল টিল্ট ও ভূকক্ষের মধ্যবর্তী কোণ ৯০°'র চেয়ে বেশি। অন্যান্য গ্যাস দানবের চেয়ে এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা কম বলে সে মহাকাশে তুলনামূলকভাবে কম তাপ বিকিরণ করে। এর জানা উপগ্রহের সংখ্যা ২৭টি। এর মধ্যে বড় উপগ্রহগুলি হচ্ছে টাইটানিয়া, ওবেরন, আমব্রিয়েল, এরিয়েল ও মিরান্ডা।
নেপচুন
নেপচুনের আকার ইউরেনাসের চেয়ে কম হলেও ভর তার থকে বেশি। ইউরেনাসের ভর পৃথিবীর ১৪ গুণ আর নেপচুনের ভর ১৭ গুণ। এ কারণে নেপচুনের ঘনত্ব তুলনামূলক বেশি। এটি তুলনামূলক বেশি তাপ বিকিরণ করে তবে এই বিকিরণের পরিমাণ বৃহস্পতি বা শনির থেকে কম। নেপচুনের জানা উপগ্রহের সংখ্যা ১৪। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ট্রাইটন ভূতাত্ত্বিকভাবে সক্রিয়। এই উপগ্রহে উষ্ণ প্রস্রবণ ও তরল নাইট্রোজেন আছে। ট্রাইটন একমাত্র বড় উপগ্রহ যার প্রতীপ কক্ষপথ আছে। নেপচুনের কক্ষপথে বেশ কিছু ক্ষুদ্র গ্রহ আছে যেগুলোকে নেপচুন ট্রোজান বলে। এই ট্রোজানগুলো মাতৃ গ্রহের সাথে ১:১ রেজোন্যান্সে আবর্তন করে।
ধূমকেতু সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: ধূমকেতু
ধূমকেতু বেশ ছোট সৌর জাগতিক বস্তু। মূলত উদ্বায়ী বরফ দ্বারা গঠিত এই বস্তুগুলোর ব্যাস হয় সাধারণত কয়েক কিলোমিটার। এরা অতি মাত্রায় উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথে আবর্তন করে; অনুসূর বিন্দু সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগের গ্রহগুলোর কক্ষপথের চেয়ে কাছে আবার অপসূর প্লুটোর কক্ষপথেরও বাইরে। ধূমকেতু যখন সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করে তখন সূর্যের খুব কাছে এসে যাওয়ার কারণে এর বরফসমৃদ্ধ পৃষ্ঠতল আয়নিত ও উর্ধ্বপাতিত হয়ে একটি লেজ গঠন করে। গ্ধূমকেতু বেশ ছোট সৌর জাগতিক বস্তু। মূলত উদ্বায়ী বরফ দ্বারা গঠিত এই বস্তুগুলোর ব্যাস হয় সাধারণত কয়েক কিলোমিটার। এরা অতি মাত্রায় উৎকেন্দ্রিক কক্ষপথে আবর্তন করে; অনুসূর বিন্দু সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগের গ্রহগুলোর কক্ষপথের চেয়ে কাছে আবার অপসূর প্লুটোর কক্ষপথেরও বাইরে। ধূমকেতু যখন সৌরজগতের অভ্যন্তরভাগে প্রবেশ করে তখন সূর্যের খুব কাছে এসে যাওয়ার কারণে এর বরফসমৃদ্ধ পৃষ্ঠতল আয়নিত ও উর্ধ্বপাতিত হয়ে একটি লেজ গঠন করে। গ্যাস আর ধূলি দিয়ে গঠিত এই লেজটি পৃথিবী থেকে মাঝে মাঝে খালি চোখেও দেখা যায়।
স্বল্প-পর্যায়ের ধূমকেতুগুলো একবার তার কক্ষপথে আবর্তন করতে ২০০ বছরেরও কম সময় নিতে পারে। অন্য দিকে দীর্ঘ-পর্যায়ের ধূমকেতুর কক্ষপথ আবর্তনের সময় হাজার হাজার বছরও হয়ে থাকে। স্বল্প পর্যায়ের ধূমকেতুর জন্ম হয় কাইপার বেষ্টনীতে আর দীর্ঘ-পর্যায়ের ধূমকেতুরা (যেমন, হেল-বপ ধূমকেতু) জন্ম নেয় উওর্ট মেঘে। অনেক ধূমকেতু দলই একটি মাতৃ ধূমকেতু ভেঙে উৎপত্তি লাভ করেছে। যেমন, Kreutz Sungrazers ধূমকেতু দল। বেশ কিছু অধিবৃত্তীয় কক্ষপথবিশিষ্ট ধূমকেতু সৌরজগতের বাইরেও সৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য এই ধূমকেতুগুলোর কক্ষপথ সঠিকভাবে নির্ণয় করা বেশ কষ্টকর। প্রবীণ ধূমকেতু, সৌরবায়ুর কারণে যাদের লেজের অধিকাংশই মহাকাশে বিলীন হয়ে গেছে, তাদেরকে কখনও কখনও গ্রহাণু ধরা হয়।
সেন্টাউর
সেন্টাউর ৯ থেকে ৩০ জ্যোতির্বিজ্ঞান একক দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত বরফসমৃদ্ধ বস্তু যেগুলো অনেকটাই ধূমকেতুর মত। বৃহস্পতি ও নেপচুনের মাঝামাঝি একটি অঞ্চলে থেকে তারা সূর্যকে আবর্তন করে। এখন পর্যন্ত জানা সর্ববৃহৎ সেন্টাউর হচ্ছে ১০১৯৯ ক্যারিক্লো যার ব্যাস ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটারের মধ্যে। সর্বপ্রথম আবিষ্কৃত সেন্টাউরের নাম ২০৬০ কাইরন যাকে ধূমকেতু বলা হয়। কারণ ধূমকেতুর মতই এর একটি লেজ আছে। অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীই সেন্টাউরকে ভেতরের দিকে বিক্ষিপ্ত কাইপার বেষ্টনী বস্তু নামে আখ্যায়িত করেন। বাইরের দিকে বিক্ষিপ্ত কাইপার বেষ্টনী বস্তুও রয়েছে যেগুলো বিক্ষিপ্ত চাকতির মধ্যে অবস্থান করে।
Comments
Post a Comment