কোরিওলিস প্রভাব-koriolis ball

                       কোরিওলিস প্রভাব


কালো বলটি ছবির উপরের অংশের জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে একটি সরলরেখায় চলছে। কিন্তু ঘূর্ণনশীল/অ-জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে অবস্থানকারী দর্শক ( লাল বিন্দু ) [ ছবির নিচের অংশে ] কাঠামোতে ক্রিয়াশীল কোরিওলিস ও কেন্দ্রবিমুখী বলের প্রভাবে বলটিকে বেঁকে যেতে দেখবেন। .
কোরিওলিস প্রভাব বলতে পদার্থবিদ্যায় গতিশীল বস্তুসমূহের আপাত বিচ্যুতি বোঝায়। বস্তুসমূহের গতিকে এইক্ষেত্রে একটি ঘূর্ণনশীল প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বর্ণনা করা হয়। ঘড়ির কাটার দিকে ঘূর্ণনশীল প্রসঙ্গ কাঠামোতে, বস্তুর গতির দিকের বামে বিচ্যুতি ঘটে। আর ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘূর্ণনের ক্ষেত্রে, বিচ্যুতি ঘটে ডানে। যদিও অনেকেই এই ঘটনা ইতোপূর্বে লক্ষ করেছিলেন, তবে ১৮৩৫ সালে ফরাসি বিজ্ঞানী গ্যাসপার-গুস্তাভ কোরিওলিস প্রথম গাণিতিক বর্ণনা প্রকাশ করেন। তিনি এর সাথে ওয়াটার হুইল ( যার মাধ্যমে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় ) তত্ত্বের সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ থেকেই কোরিওলিস বল টার্মটি আবহবিদ্যা/বায়ুবিজ্ঞান এর সম্পৃক্তে ব্যবহৃত হতে থাকে।

নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্র একটি সুষম গতির জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে কোন বস্তুর গতি বর্ণনা করে। যখন নিউটনের সূত্রগুলোকে একটি সুষম ঘূর্ণনশীল প্রসঙ্গ কাঠামোতে স্থানান্তর করা হয়, তখন কোরিওলিস ও কেন্দ্রবিমুখী বলের উদ্ভব ঘটে। উভয় বলই বস্তুর ভরের সমানুপাতিক। কোরিওলিস বল ঘূর্ণন হারের সমানুপাতিক আর কেন্দ্রবিমুখী বল ঘূর্ণন হারের বর্গের সমানুপাতিক। কোরিওলিস বল তার ঘূর্ণন অক্ষের লম্বদিকে ও ঘূর্ণন কাঠামোতে বস্তুর গতির দিকে ক্রিয়া করে এবং এটি ঘূর্ণন কাঠামোতে বস্তুর গতির সমানুপাতিক। কেন্দ্রবিমুখী বল ব্যাসার্ধ বরাবর বাইরের দিকে ক্রিয়া করে এবং এটি ঘূর্ণন কাঠামোর অক্ষ থেকে বস্তুর দূরত্বের সমানুপাতিক। এই অতিরিক্ত বলগুলোকে বলা হয় নিষ্ক্রিয় বল, কাল্পনিক বা ছদ্ম বল। এই বলগুলো কোন কাঠামো ব্যবস্থায় নিউটনের সূত্রগুলোর প্রয়োগে ভূমিকা রাখে। এরা হচ্ছে সংশোধন গুণক [ কারেকশন ফ্যাক্টর ] যাদের সুষম গতিশীল বা জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে কোন অস্তিত্ব নেই।

আমাদের পরিচিত একটি প্রসঙ্গ কাঠামো হচ্ছে পৃথিবী। কোরিওলিস প্রভাব পৃথিবীর ঘূর্ণন এবং বস্তুর জড়তার কারণে ঘটে থাকে। যেহেতু পৃথিবী প্রতিদিন মাত্র একটি ঘূর্ণন সম্পন্ন করে তাই কোরিওলিস প্রভাবের প্রভাব খুবই সামান্য অনুভূত হয়। সাধারণভাবে বিস্তৃত দূরত্ব ও দীর্ঘ সময় ধরে সংঘটিত গতির ক্ষেত্রে যেমন, আবহমণ্ডলে বায়ুর গতিশীলতা বা সমুদ্রের পানির ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। এই গতিগুলো পৃথিবীপৃষ্ঠ দ্বারা আবদ্ধ থাকায় কোরিওলিস বলের শুধু অনুভূমিক উপাংশটিই গুরুত্বপূর্ণ। এই বল পৃথিবী পৃষ্ঠের উত্তর গোলার্ধে বস্তুর ডানদিকে (গতির দিকের সাপেক্ষে) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যাবার জন্য দায়ী। এই অনুভূমিক বিচ্যুতি প্রভাব মেরুসমূহের নিকট সর্বোচ্চ এবং বিষুব রেখায় সর্বনিম্ন। এর কারণ উত্তর বা দক্ষিণে ভ্রমণ করার সময় বস্তু যতই মেরুর নিকটবর্তী হয় অক্ষাংশ বৃত্তের ব্যাসের পরিবর্তনের হার ততই বৃদ্ধি পায়। বাতাস এবং স্রোত অঘূর্ণনশীল কাঠামোতে সরাসরি উচ্চ বায়ুচাপের অঞ্চল থেকে নিম্ন বায়ুচাপের অঞ্চলে ধাবিত হয়। কিন্তু কোরিওলিস প্রভাবের ক্ষেত্রে তারা বিষুবরেখার উত্তরে ডান দিকে এবং দক্ষিণে বাম দিকে বিচ্যুত হওয়ার প্রবণতা দেখায়। এটি বড় বড় সাইক্লোনের ঘূর্ণনের জন্য দায়ী। কোনরূপ যৌক্তিক বিশ্লেষণ ছাড়াই এটাকে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলা যায়, একটি বস্তু বিবেচনা করুন যেটি বিষুবরেখা থেকে উত্তরমুখী গতিশীল ও বিষুবরেখায় এর গতি বজায় রাখায় প্রবণতা দেখায় যেখানে “অনুভূমিক ব্যাস” বৃহত্তর ( পৃথিবী গোলককে পর্যবেক্ষণ করলে ডানদিকে ঘূর্ণনশীল বলে মনে হবে) এবং ফলস্বরূপ উত্তরমুখী হয়ে অতিক্রম করার সময় এটি ডানদিকে বেঁকে যাওয়ার প্রবণতা দেখায় যেখানে “অনুভূমিক ব্যাস” ক্ষুদ্রতর ( অক্ষাংশের রিং ) এবং পৃথিবীর কেন্দ্রীয় অক্ষের চারদিকে বস্তুসমূহের গতি ধীর।

Comments

Popular posts from this blog

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা(patharkuchi Patti ka upkar)

রামায়ণ(RAMAYAN)full story of bengali

সুনামি সৃষ্টির কারণ