স্বাস্থ্যউজ্জ্বল ঝলমলে সুন্দর চুলের টিপস(hair &,care)

           স্বাস্থ্যউজ্জ্বল ঝলমলে সুন্দর চুলের টিপস


সব নারীর স্বাস্থ্যউজ্জ্বল ঝলমলে রেশমি চুলের প্রতি আকর্ষণ থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত কেমিক্যাল, আবহাওয়া এবং সঠিক যত্নের অভাবে চুলের অবস্থা দিনকে দিন খারাপই হতে থাকে। এর ফলে চুল পড়ে যাওয়া, চুলে রুক্ষতা চলে আসা, আগা ফাটার সমস্যা যেন লেগেই থাকে। যার কারণে বেশীরভাগ নারীর কাছে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল ঝলমলে চুল পাওয়ার স্বপ্নটা আসলে স্বপ্নই থেকে যায়। কিন্তু  কিছু নিয়মের মধ্যে থাকলে আপনার চুলের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে পারবেন খুব সহজেই। আর এর মধ্যে যে কোন পদ্ধতি নিয়মিত মেনে আপনি চুলের যত্ন নিতে পারেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক ঝলমলে সুন্দর চুলের টিপসগুলো।



চুল ধোয়ার আগে করণীয় কিছু কাজ

 ১। চুল ধোয়ার আগে বা আগের রাতে মাথায় তেল দিয়ে রাখতে হবে। কোন সাধারণ তেল নয়। চেষ্টা করতে হবে দুই প্রকার তেল মিশিয়ে দেওয়ার জন্য। ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল বা বাদাম তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। চাইলে এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুলও মিশিয়ে নিতে পারেন।

২। এবার এই তেলটি তালুতে ভালভাবে ম্যাসাজ করে। কমপক্ষে ২০ মিনিট ম্যাসাজ করতে হবে।

৩। এরপর আপনি চাইলে হট টাওয়েল ট্রিটমেন্ট করতে পারেন। একটি টাওয়েল গরম পানিতে ভিজিয়ে সেটা দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে রাখতে হবে ৩০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু করে ফেললে হবে।

৪। কখনও গরম পানি দিয়ে চুল ধোবেন না। গরম পানি আপনার চুলকে রুক্ষ করে তুলবে।

৫। সপ্তাহে ১-২বার চুলে প্যাক ব্যবহার করতে হবে। ২টি পাকা কলা, ২ টেবিল চামচ ম্যায়নিজ এবং ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল দিয়ে প্যাক তৈরি করে নিয়ে। ঘন্টাখানেক এই প্যাকটি চুলে রেখে। তারপর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। কলা ও মধু চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলকে করে তুলবে সিল্কি।

৬। টক দই এবং ডিমের প্যাকও ব্যবহার করতে হবে মাধে মাধে। এটি আপনার চুলকে কোমল করে তোলার পাশাপাশি খুশকিও দূর করে দিবে।

৭। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না। আপনি চাইলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারও ব্যবহার করতে পারেন। চায়ের লিকার এবং লেবুর রস এক্ষেত্রে ভাল কাজে দিবে।

৮। চুল ধোয়ার পর টাওয়েল দিয়ে জোরে জোরে ঘষবেন না। এটি আপনার চুলের গোড়া দুর্বল করে দিবে। টাওয়াল দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে চুল থেকে পানি মুছে ফেলবেন।



চুল ধোয়ার পরে যা যা করনীয়

চায়ের লিকার থেরাপি

ঝলমলে চুলের জন্য দারুণ কাজ করে চায়ের লিকার। চুল যেমনি হোক না কেন তৈলাক্ত, শুষ্ক বা স্বাভাবিক- এই চায়ের লিকার মানিয়ে যাবে খুব সহজে। এটা তৈরির জন্য দুই কাপ পানি নিতে হবে। তার মাঝে ৬ টেবিল চামচ ফ্রেশ চা পাতা দিয়ে। এটাকে এখন অল্প আঁচে চুলায় ফুটতে দিতে হবে। ফুটে ফুটে লিকার ঘন হবে। এবং দুই কাপ পানি কমে এক কাপের কম হলে বুঝবেন যে রেডি হয়েছে। এখন এটাকে ঠাণ্ডা করে ছেঁকে নিয়ে। শ্যাম্পু করার পর ভেজা চুলে এই মিশ্রণ মাখতে হবে। ৫ মিনিট পর সাধারণ পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।



ভিনেগারে চুলের চমক

শ্যাম্পু করার পরে ভিনেগার মেশানো পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। আধা কাপ ভিনেগার এক মগ পানিতে মিশিয়ে নিয়ে। তারপর সেটা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। ৫ মিনিট পর আবার একটু স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। শুকিয়ে গেলেই পাবেন ঝলমলে চুল।



বেকিং সোডায় উজ্জ্বল চুল

নিস্প্রান চুলকে ঝলমলে করে তুলতে বেকিং সোডার কোন বিকল্প নেই। এ কাপ হালকা গরম পানির মাঝে ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়ে। শ্যাম্পু করা ভেজা চুলে এই মিশ্রণ লাগাতে হবে। ৫ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এবার চুলের চমক দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।



চাল ধোয়া পানিতে ঝলমল চুল

চুলের কন্ডিশনার হিসেবে খুবই ভাল চাল ধোয়া পানি। ভাল করে চুলে শ্যাম্পু করে। এর পর কন্ডিশনারের মতো চুলে চাল ধোয়া পানি লাগাতে হবে। কয়েক মিনিট রেখে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। চালের প্রোটিন চুল ভাল রাখবে। এবং চুল ঝলমল হবে।



ঝলমল সুন্দর চুল পেতে চাইলে যে সকল বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে

১। কমপক্ষে তিন দিন পর পর চুল পরিষ্কার করতে হবে, তা না হলে ত্বকে ময়লা জমে খুশকি হতে পারে।

২। চুল অতিরিক্ত ধোয়া ঠিক নয়, এতে মাথার ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরিত হয় ও চুল চিটচিটে করে তোলে।

৩। আপনার চুলের জন্য উপযোগী একটি শ্যাম্পু নির্দিষ্ট করে নিবেন, তবে অবশ্যই যেন তা আপনার চুলকে কার্যকর ভাবে পরিষ্কার করে। চুলকে নরম, মসৃন ও ময়েশ্চারাইজ করে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন।

৪। শ্যাম্পু করার পূর্বে সম্পূর্ন চুল পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে, এরপর শ্যাম্পু দিতে হবে। ধীরে ধীরে শ্যাম্পু পুরো চুলে এবং মাথার ত্বকে মেখে নিয়ে। এরপর ভালো ভাবে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখবেন শ্যাম্পু যেন চুলে বা মাথার ত্বকে লেগে না থাকে। মাথার ত্বক পরিষ্কারের জন্য আঙ্গুল ব্যবহার করবেন, নখ নয়।

৫। প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর একটি ভালো কন্ডিশনার ব্যবহার অবশ্যক। কন্ডিশনার চুলকে ভেঙ্গে যাওয়া, রুক্ষ হয়ে যাওয়কন্ডিশনার চুলকে ভেঙ্গে যাওয়া, রুক্ষ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। চুলকে জটহীন, নরম, মসৃণ ও আকর্ষনীয় করে তুলতে কন্ডিশনার খুবই জরুরী। আপনার চুলের উপযোগী একটি কন্ডিশনার বেঁছে নিবেন। কন্ডিশনার না দিলে প্রাকৃতিক উপাদান দিবেন। কিন্তু দিবেন অবশ্যই।

৬। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনার মাথার ত্বক ম্যাসাজ করবেন। এর ফলে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে, ত্বকের মৃত কোষ ও খুশকি দূর হবে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

৭। চুলের মলিনতা ও রুক্ষতা দূর করতে সপ্তাহে একদিন চুলে উষ্ণ তেল ম্যাসাজ করবেন। এটি চুল ঝরে যাওয়া প্রতিরোধ করে। নারকেল, জলপাই অথবা বাদাম তেল হালকা গরম করে আঙ্গুলের সাহায্যে পুরো মাথায় চক্রাকারে ম্যাসাজ করে। কয়েক ঘন্টা অথবা পুরো রাত অপেক্ষা করে, তারপর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে।

৮। মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন। সম্ভব হলে নরম দাঁতের চিরুনি।

৯। ঘরের বাইরে যাওয়ার আগে চুলে একটি স্কার্ফ পেচিয়ে নিবেন। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি চুলের স্বাভাবিক রঙ ও উজ্জ্বলতা নষ্ট করে ফেলে। এটি আপনার চুলকে ধূলো ও ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করবে।

১০। চুলের ধরন তৈলাক্ত হলে, শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে খানিকটা লেবুর রস অথবা খানিকটা ভিনেগার মিশিয়ে পুরো চুল ধুয়ে ফেলবেন। চুল ঝলমলে ও উজ্জ্বল দেখাবে।

১১। যাদের সুইমিং পুলে সাঁতারের বা ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে, তারা নিয়মিত চুলে শ্যাম্পু করবেন। এক্ষেত্রে একটি হালকা শ্যাম্পু বেঁছে নিবেন যেন তা আপনার চুলকে কার্যকর ভাবে পরিষ্কার করে ও ময়েশ্চারাইজ করে। শ্যাম্পু করার পর একটি ভালো মানের হালকা কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।

১২। চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সপ্তাহে এক দিন আপনার চুলের উপযোগী একটি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করবেন।

১৩। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করবেন। আপনার চুলের সঠিক সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য এটি সর্বোচ্চ উত্তম উপায়।



চুলের যত্নে কিছু বর্জনীয়

১। চুলে অতিরিক্ত চিরুনি করা বা ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকবেন।

২। চুলে কখনই সাবান ব্যবহার করবেন না। কারণ সাবানের ক্ষার চুলকে রুক্ষ করে। শ্যাম্পুই উৎকৃষ্ট।

৩। কন্ডিশনারযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার কর্বেন। এটি চুলকে ময়েশ্চারাইজ করবে। তবে অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর আলাদা করে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

৪। চুলের ধরন তৈলাক্ত হলে হালকা ধরনের কন্ডিশনার ব্যবহার করা ভালো। মাথার ত্বকে কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত নয়।

৫। শ্যাম্পু করার পর চুলে চিরুনি করা বা ব্রাশ করা থেকে বিরত থাকবেন। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায় ও চুল পড়তে পারে।

৬। স্বাভাবিক উপায়ে চুল শুকাতে হবে। হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না।

Comments

Popular posts from this blog

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা(patharkuchi Patti ka upkar)

রামায়ণ(RAMAYAN)full story of bengali

সুনামি সৃষ্টির কারণ