পৃথিবীর বার্ষিক গতি
পৃথিবীর বার্ষিক গতি
পৃথিবীর কক্ষপথে বিভিন্ন বিন্দুতে অবস্থান (স্কেল অনুসারে নয়)
পৃথিবী সূর্যকে ১৪৯.৬০ মিলিয়ন কিলোমিটার (৯২.৯৬ মিলিয়ন মাইল) গড় দূরত্বে প্রদক্ষিণ করে,[১] এবং একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫.২৫৬ দিন (১ নাক্ষত্র বছর) সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে পৃথিবী ৯৪০ মিলিয়ন কি.মি. (৫৮৪ মিলিয়ন মাইল) ভ্রমণ করে। [২] পৃথিবীর কক্ষপথের কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ০.০১৬৭। সূর্য এবং পৃথিবীর সম্মিলিত ভরের ৯৯.৭৬% সূর্যের দখলে হওয়ায়, পৃথিবীর কক্ষপথের কেন্দ্র সূর্যের কেন্দ্রের অত্যন্ত কাছে অবস্থিত।
পৃথিবী সূর্যকে পৃথিবীর সাপেক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রদক্ষিণ করে (বিপ্রতীপ গতি)। এর ফলে পৃথিবী থেকে সূর্যকে অন্যান্য তারার সাপেক্ষে প্রতি সৌর দিনে প্রায় ১° পূর্ব দিকে সরে যেতে দেখা যায় [nb ১] পৃথিবীর কক্ষপথের গতি প্রায় ৩০ কিমি./সে. (১০৯,০৪৪ কিমি./ঘ.; ৬৭,৭৫৬ মাইল/ঘণ্টা), অর্থাৎ পৃথিবী ৭ মিনিটের মধ্যে এর নিজ ব্যাসের সমান দূরত্ব এবং ৪ ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। [৩]
সূর্য অথবা পৃথিবীর উত্তর মেরুর দিকে মহাশূন্যে একটি সুবিধাজনক স্থান থেকে দেখলে দেখা যাবে যে, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে প্রদক্ষিণ করে। সেই একই বিন্দু থেকে দেখলে মনে হবে যে, পৃথিবী এবং সূর্য উভয়েই নিজ নিজ অক্ষের উপর ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরছে। পৃথিবীর উপর প্রভাব সম্পাদনা
পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকার কারণে (অক্ষীয় ঢাল নামে পরিচিত), বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর আকাশে সূর্যের গতিপথের পরিবর্তন দেখা যায়। যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তখন উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য বড় হয় এবং সেখানকার একজন পর্যবেক্ষক সূর্যকে আকাশে উচু অবস্থানে দেখতে পান। এর ফলে উত্তর গোলার্ধের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (গ্রীষ্মকাল) এবং অধিক পরিমাণ সৌর বিকিরণ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছায়। আবার যখন উত্তর মেরু সূর্য থেকে দূরে হেলে পড়ে তখন, বিপরীত ঘটনা ঘটে এবং উত্তর গোলার্ধের তাপমাত্রা হ্রাস পায় (শীতকাল)। সুমেরুবৃত্তের উত্তরে এবং কুমেরুবৃত্তের দক্ষিণে, একটি চরমভাবাপন্ন অবস্থা দেখা যায়। এখানে বছরের একটি সময়ে ক্রমাগত দিনের আলো, এবং বিপরীত সময়ে একটানা রাতের অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। অক্ষীয় ঢালের ফলে আবহাওয়ার বৈচিত্র্য দেখা যায় যার ফলশ্রুতিতে ঋতু পরিবর্তন ঘটে।[৬]
অধিবর্ষ সম্পাদনা
অধিবর্ষ বা "Leap Year" একটি বিশেষ বছর। যে বছরে সাধারনত অন্যান্য বছরের তুলনায় একটি দিন জ্যাতিবিজ্ঞানিক বছরের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য বেশি থাকে তাকে অধিবর্ষ বলে। পৃথিবী তার নিজস্ব কক্ষপথে বছরে একবার সূর্যের চারিপাশে পরিক্রমন করে। এ পরিক্রমণ সময়কে সৌরবছর বলে। একবার পরিক্রমনের সময় হচ্ছে প্রায় ৩৬৫ দিন, ৫ঘন্টা, ৪৮ মিনিট, ৪৭ সেকেন্ড। যা প্রায় ৬ ঘন্টার সমান। অথচ বর্ষপঞ্জিতে ৩৬৫ দিনে এক বছর হিসাব করা হয়। এভাবে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় হিসাবের বাইরে থেকে যায়। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতি ৪ বছর পর পর প্রচলিত বর্ষপঞ্জিতে ১ দিন যোগ করে ৩৬৬ দিনে এক বছর হিসাব করা হয়। আর এই ৩৬৬ দিন এর বছরটিকেই অধিবর্ষ বলা হয়। অধিবর্ষের বাড়তি দিনটি ফেব্রুয়ারি মাসের সাথে যোগ করে হিসাব করা হয়। কক্ষপথের ঘটনা সম্পাদনা
জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে, ঋতু পরিবর্তন সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আপেক্ষিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে দুইটি অয়নান্ত-বিন্দু (পৃথিবীর কক্ষপথে যে দুইটি বিন্দুতে পৃথিবীর মেরুদ্বয়, সূর্যের দিকে বা সূর্য থেকে দূরে সর্বোচ্চ পরিমাণ হেলে থাকে,Solstice) এবং দুইটি বিষুববিন্দু (পৃথিবীর কক্ষপথে যে দুইটি অবস্থানে পৃথিবীর উভয় মেরু সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে, Equinox)। অয়নান্ত-বিন্দু এবং বিষুববিন্দু একটি বছরকে চারটি প্রায় সমান অংশে বিভক্ত করে। উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ অয়নান্ত হয় ২১শে ডিসেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে; উত্তর অয়নান্ত ঘটে ২১শে জুনের কাছাকাছি; বসন্ত বিষুব হয় ২০শে মার্চ এর দিকে; এবং শারদ বিষুব ঘটে ২৩শে সেপ্টেম্বরের কাছাকাছি সময়ে। [৭] দক্ষিণ গোলার্ধে পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের প্রভাব উত্তর গোলার্ধের প্রভাবের বিপরীত, সুতরাং অয়নান্ত-বিন্দু এবং বিষুববিন্দু তে দক্ষিণ গোলার্ধের ঋতু উত্তর গোলার্ধের বিপরীত হবে (যেমন, উত্তর গোলার্ধে উত্তর অয়নান্তে গ্রীষ্মকাল হলেও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল)।
আধুনিককালে, পৃথিবীর অনুসূর ঘটে ৩রা জানুয়ারির কাছাকাছি সময় এবং অপসূর হয় ৪ঠা জুলাই নাগাদ (অন্যান্য যুগের জন্য, দেখুন প্রিসেশন এবং মিলানকোভিচ চক্র )। পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্ব পরিবর্তনের ফলে অপসূরের তুলনায় অনুসূর বিন্দুতে প্রায় ৬.৯% অধিক সৌরশক্তি পৃথিবীতে পৌঁছায়।[৮] যেহেতু পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছানোর সময় দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তাই উত্তরের চেয়ে দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সামান্য বেশি শক্তি পায়। তবে এর প্রভাব অক্ষীয় ঢালের কারণে মোট শক্তি পরিবর্তনের প্রভাবের চেয়ে অনেক কম এবং দক্ষিণ গোলার্ধের পানির অনুপাত বেশী হওয়ায় এই অতিরিক্ত শক্তি পানি দ্বারা শোষিত হয়। [৯]
পৃথিবীর হিল গোলকের (মহাকর্ষীয় প্রভাব অঞ্চল) ব্যাসার্ধ প্রায় ১,৫০০,০০০ কিলোমিটার (০.০১ জ্যোতির্বিদ্যা-একক ) যা চাঁদের দূরত্বের প্রায় চারগুণ। [১০] [nb ২] এই অঞ্চলে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় প্রভাব সূর্য এবং দূরবর্তী গ্রহগুলির থেকে বেশি শক্তিশালী। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে হলে কোন বস্তুর এই ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা বাধ্যতামূলক, অন্যথায় তা সূর্যের মহাকর্ষীয় টানের প্রভাবে ছিটকে পড়তে পারে।
কক্ষপথীয় বৈশিষ্ট্য
সময়কাল J2000.0[nb ৩]
অপসূর-বিন্দু ১৫২.১০×১০৬ কিমি (৯৪.৫১×১০৬ মা)
১.০১৬৭ জ্যোতির্বিদ্যা-একক[nb ৪]
অনুসূর বিন্দু ১৪৭.১০×১০৬ কিমি (৯১.৪০×১০৬ মা)
০.৯৮৩২৯ জ্যোতির্বিদ্যা-একক[nb ৪]
মুখ্য অক্ষ ১৪৯.৬০×১০৬ কিমি (৯২.৯৬×১০৬ মা)
১.০০০০০১০১৮ জ্যোতির্বিদ্যা-একক [১১]
কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ০.০১৬৭০৮৬[১১]
কক্ষপথীয় ঢাল ৭.১৫৫° সূর্যের বিষুবতলের সাপেক্ষে
১.৫৭৮৬৯০°[১২] সৌজগতের মূল তলের সাপেক্ষে
উৎবিন্দুর দ্রাঘিমা (লংগিটিউড অব অ্যাসেন্ডিং নোড) ১৭৪.৯°[১১]
লংগিটিউড অব পেরিয়াপসিস ১০২.৯°[১১]
আর্গুমেন্ট অব পেরিয়াপসিস ২৮৮.১°[১১][nb ৫]
আবর্তনকাল ৩৬৫.২৫৬ ৩৬৩ ০০৪ দিন[১৩]
গড় কক্ষপথীয় গতি ২৯.৭৮ কিমি/সে. (১৮.৫ মাইল/সে.) [১৪]
১,০৭,২০০ কিমি/ঘ (৬৬,৬০০ মা/ঘ)
অপসূর বিন্দুতে গতি ২৯.২৯ কিমি/সে. (১৮.২০ মাইল/সে.) [১৪]
অনুসূর বিন্দুতে গতি ৩০.২৯ কিমি/সে. (১৮.৮২ মাইল/সে.)[১৪]
নিচের চিত্রে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথে বিভিন্ন অবস্থান এবং অক্ষীয় ঢালের মধ্যকার সম্পর্ককে দেখানো হয়েছে। এখানে পৃথিবী উপবৃত্তাকার কক্ষপথের ছয়টি চিত্রের প্রতিটির মধ্য দিয়ে ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করে। এখানে, ২ থেকে ৫ই জানুয়ারির মধ্যে পেরিহেলিয়ন বা অনুসূর (পেরিয়াপসিস - সূর্যের নিকটতম বিন্দু); ১৯ থেকে ২১শে মার্চের মধ্যে বসন্ত বিষুব; ২০ থেকে ২২শে জুনের মধ্যে উত্তর-অয়নান্ত; ৩ থেকে ৫ই জুলাই এর মধ্যে কোনও সময় অ্যাফিলিয়ন বা অপসূর (অ্যাপোয়াপসিস - সূর্য থেকে দূরতম বিন্দু); ২২ থেকে ২৪শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শারদ বিষুব এবং ২১ থেকে ২৩শে ডিসেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ-অয়নান্ত ঘটে। [৭] চিত্রটিতে পৃথিবীর কক্ষপথের আকার অতিরঞ্জিতভাবে দেখানো হয়েছে, প্রকৃত কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা এর চেয়ে কম।
পৃথিবীর কক্ষপথে অক্ষীয় ঢালের কারণে, উত্তর অয়নান্তে ২৩.৩° উত্তর অক্ষাংশে (কর্কটক্রান্তি) এবং দক্ষিণ অয়নান্তে ২৩.৩° দক্ষিণ অক্ষাংশে (মকরক্রান্তি) সূর্যের রশ্মির তীব্রতা সর্বাধিক হয়।[১৫]
পৃথিবীর কক্ষপথে বিভিন্ন বিন্দুতে অবস্থান (স্কেল অনুসারে নয়)
পৃথিবী সূর্যকে ১৪৯.৬০ মিলিয়ন কিলোমিটার (৯২.৯৬ মিলিয়ন মাইল) গড় দূরত্বে প্রদক্ষিণ করে,[১] এবং একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫.২৫৬ দিন (১ নাক্ষত্র বছর) সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে পৃথিবী ৯৪০ মিলিয়ন কি.মি. (৫৮৪ মিলিয়ন মাইল) ভ্রমণ করে। [২] পৃথিবীর কক্ষপথের কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ০.০১৬৭। সূর্য এবং পৃথিবীর সম্মিলিত ভরের ৯৯.৭৬% সূর্যের দখলে হওয়ায়, পৃথিবীর কক্ষপথের কেন্দ্র সূর্যের কেন্দ্রের অত্যন্ত কাছে অবস্থিত।
পৃথিবী সূর্যকে পৃথিবীর সাপেক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রদক্ষিণ করে (বিপ্রতীপ গতি)। এর ফলে পৃথিবী থেকে সূর্যকে অন্যান্য তারার সাপেক্ষে প্রতি সৌর দিনে প্রায় ১° পূর্ব দিকে সরে যেতে দেখা যায় [nb ১] পৃথিবীর কক্ষপথের গতি প্রায় ৩০ কিমি./সে. (১০৯,০৪৪ কিমি./ঘ.; ৬৭,৭৫৬ মাইল/ঘণ্টা), অর্থাৎ পৃথিবী ৭ মিনিটের মধ্যে এর নিজ ব্যাসের সমান দূরত্ব এবং ৪ ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। [৩]
সূর্য অথবা পৃথিবীর উত্তর মেরুর দিকে মহাশূন্যে একটি সুবিধাজনক স্থান থেকে দেখলে দেখা যাবে যে, পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে প্রদক্ষিণ করে। সেই একই বিন্দু থেকে দেখলে মনে হবে যে, পৃথিবী এবং সূর্য উভয়েই নিজ নিজ অক্ষের উপর ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরছে। পৃথিবীর উপর প্রভাব সম্পাদনা
পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকার কারণে (অক্ষীয় ঢাল নামে পরিচিত), বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর আকাশে সূর্যের গতিপথের পরিবর্তন দেখা যায়। যখন উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তখন উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য বড় হয় এবং সেখানকার একজন পর্যবেক্ষক সূর্যকে আকাশে উচু অবস্থানে দেখতে পান। এর ফলে উত্তর গোলার্ধের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (গ্রীষ্মকাল) এবং অধিক পরিমাণ সৌর বিকিরণ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছায়। আবার যখন উত্তর মেরু সূর্য থেকে দূরে হেলে পড়ে তখন, বিপরীত ঘটনা ঘটে এবং উত্তর গোলার্ধের তাপমাত্রা হ্রাস পায় (শীতকাল)। সুমেরুবৃত্তের উত্তরে এবং কুমেরুবৃত্তের দক্ষিণে, একটি চরমভাবাপন্ন অবস্থা দেখা যায়। এখানে বছরের একটি সময়ে ক্রমাগত দিনের আলো, এবং বিপরীত সময়ে একটানা রাতের অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। অক্ষীয় ঢালের ফলে আবহাওয়ার বৈচিত্র্য দেখা যায় যার ফলশ্রুতিতে ঋতু পরিবর্তন ঘটে।[৬]
অধিবর্ষ সম্পাদনা
অধিবর্ষ বা "Leap Year" একটি বিশেষ বছর। যে বছরে সাধারনত অন্যান্য বছরের তুলনায় একটি দিন জ্যাতিবিজ্ঞানিক বছরের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য বেশি থাকে তাকে অধিবর্ষ বলে। পৃথিবী তার নিজস্ব কক্ষপথে বছরে একবার সূর্যের চারিপাশে পরিক্রমন করে। এ পরিক্রমণ সময়কে সৌরবছর বলে। একবার পরিক্রমনের সময় হচ্ছে প্রায় ৩৬৫ দিন, ৫ঘন্টা, ৪৮ মিনিট, ৪৭ সেকেন্ড। যা প্রায় ৬ ঘন্টার সমান। অথচ বর্ষপঞ্জিতে ৩৬৫ দিনে এক বছর হিসাব করা হয়। এভাবে প্রায় ৬ ঘন্টা সময় হিসাবের বাইরে থেকে যায়। এই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতি ৪ বছর পর পর প্রচলিত বর্ষপঞ্জিতে ১ দিন যোগ করে ৩৬৬ দিনে এক বছর হিসাব করা হয়। আর এই ৩৬৬ দিন এর বছরটিকেই অধিবর্ষ বলা হয়। অধিবর্ষের বাড়তি দিনটি ফেব্রুয়ারি মাসের সাথে যোগ করে হিসাব করা হয়। কক্ষপথের ঘটনা সম্পাদনা
জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে, ঋতু পরিবর্তন সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আপেক্ষিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে দুইটি অয়নান্ত-বিন্দু (পৃথিবীর কক্ষপথে যে দুইটি বিন্দুতে পৃথিবীর মেরুদ্বয়, সূর্যের দিকে বা সূর্য থেকে দূরে সর্বোচ্চ পরিমাণ হেলে থাকে,Solstice) এবং দুইটি বিষুববিন্দু (পৃথিবীর কক্ষপথে যে দুইটি অবস্থানে পৃথিবীর উভয় মেরু সূর্য থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করে, Equinox)। অয়নান্ত-বিন্দু এবং বিষুববিন্দু একটি বছরকে চারটি প্রায় সমান অংশে বিভক্ত করে। উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ অয়নান্ত হয় ২১শে ডিসেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে; উত্তর অয়নান্ত ঘটে ২১শে জুনের কাছাকাছি; বসন্ত বিষুব হয় ২০শে মার্চ এর দিকে; এবং শারদ বিষুব ঘটে ২৩শে সেপ্টেম্বরের কাছাকাছি সময়ে। [৭] দক্ষিণ গোলার্ধে পৃথিবীর অক্ষীয় ঢালের প্রভাব উত্তর গোলার্ধের প্রভাবের বিপরীত, সুতরাং অয়নান্ত-বিন্দু এবং বিষুববিন্দু তে দক্ষিণ গোলার্ধের ঋতু উত্তর গোলার্ধের বিপরীত হবে (যেমন, উত্তর গোলার্ধে উত্তর অয়নান্তে গ্রীষ্মকাল হলেও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল)।
আধুনিককালে, পৃথিবীর অনুসূর ঘটে ৩রা জানুয়ারির কাছাকাছি সময় এবং অপসূর হয় ৪ঠা জুলাই নাগাদ (অন্যান্য যুগের জন্য, দেখুন প্রিসেশন এবং মিলানকোভিচ চক্র )। পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্ব পরিবর্তনের ফলে অপসূরের তুলনায় অনুসূর বিন্দুতে প্রায় ৬.৯% অধিক সৌরশক্তি পৃথিবীতে পৌঁছায়।[৮] যেহেতু পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে পৌঁছানোর সময় দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে, তাই উত্তরের চেয়ে দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্য থেকে সামান্য বেশি শক্তি পায়। তবে এর প্রভাব অক্ষীয় ঢালের কারণে মোট শক্তি পরিবর্তনের প্রভাবের চেয়ে অনেক কম এবং দক্ষিণ গোলার্ধের পানির অনুপাত বেশী হওয়ায় এই অতিরিক্ত শক্তি পানি দ্বারা শোষিত হয়। [৯]
পৃথিবীর হিল গোলকের (মহাকর্ষীয় প্রভাব অঞ্চল) ব্যাসার্ধ প্রায় ১,৫০০,০০০ কিলোমিটার (০.০১ জ্যোতির্বিদ্যা-একক ) যা চাঁদের দূরত্বের প্রায় চারগুণ। [১০] [nb ২] এই অঞ্চলে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় প্রভাব সূর্য এবং দূরবর্তী গ্রহগুলির থেকে বেশি শক্তিশালী। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে হলে কোন বস্তুর এই ব্যাসার্ধের মধ্যে থাকা বাধ্যতামূলক, অন্যথায় তা সূর্যের মহাকর্ষীয় টানের প্রভাবে ছিটকে পড়তে পারে।
কক্ষপথীয় বৈশিষ্ট্য
সময়কাল J2000.0[nb ৩]
অপসূর-বিন্দু ১৫২.১০×১০৬ কিমি (৯৪.৫১×১০৬ মা)
১.০১৬৭ জ্যোতির্বিদ্যা-একক[nb ৪]
অনুসূর বিন্দু ১৪৭.১০×১০৬ কিমি (৯১.৪০×১০৬ মা)
০.৯৮৩২৯ জ্যোতির্বিদ্যা-একক[nb ৪]
মুখ্য অক্ষ ১৪৯.৬০×১০৬ কিমি (৯২.৯৬×১০৬ মা)
১.০০০০০১০১৮ জ্যোতির্বিদ্যা-একক [১১]
কক্ষীয় উৎকেন্দ্রিকতা ০.০১৬৭০৮৬[১১]
কক্ষপথীয় ঢাল ৭.১৫৫° সূর্যের বিষুবতলের সাপেক্ষে
১.৫৭৮৬৯০°[১২] সৌজগতের মূল তলের সাপেক্ষে
উৎবিন্দুর দ্রাঘিমা (লংগিটিউড অব অ্যাসেন্ডিং নোড) ১৭৪.৯°[১১]
লংগিটিউড অব পেরিয়াপসিস ১০২.৯°[১১]
আর্গুমেন্ট অব পেরিয়াপসিস ২৮৮.১°[১১][nb ৫]
আবর্তনকাল ৩৬৫.২৫৬ ৩৬৩ ০০৪ দিন[১৩]
গড় কক্ষপথীয় গতি ২৯.৭৮ কিমি/সে. (১৮.৫ মাইল/সে.) [১৪]
১,০৭,২০০ কিমি/ঘ (৬৬,৬০০ মা/ঘ)
অপসূর বিন্দুতে গতি ২৯.২৯ কিমি/সে. (১৮.২০ মাইল/সে.) [১৪]
অনুসূর বিন্দুতে গতি ৩০.২৯ কিমি/সে. (১৮.৮২ মাইল/সে.)[১৪]
নিচের চিত্রে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথে বিভিন্ন অবস্থান এবং অক্ষীয় ঢালের মধ্যকার সম্পর্ককে দেখানো হয়েছে। এখানে পৃথিবী উপবৃত্তাকার কক্ষপথের ছয়টি চিত্রের প্রতিটির মধ্য দিয়ে ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করে। এখানে, ২ থেকে ৫ই জানুয়ারির মধ্যে পেরিহেলিয়ন বা অনুসূর (পেরিয়াপসিস - সূর্যের নিকটতম বিন্দু); ১৯ থেকে ২১শে মার্চের মধ্যে বসন্ত বিষুব; ২০ থেকে ২২শে জুনের মধ্যে উত্তর-অয়নান্ত; ৩ থেকে ৫ই জুলাই এর মধ্যে কোনও সময় অ্যাফিলিয়ন বা অপসূর (অ্যাপোয়াপসিস - সূর্য থেকে দূরতম বিন্দু); ২২ থেকে ২৪শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে শারদ বিষুব এবং ২১ থেকে ২৩শে ডিসেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ-অয়নান্ত ঘটে। [৭] চিত্রটিতে পৃথিবীর কক্ষপথের আকার অতিরঞ্জিতভাবে দেখানো হয়েছে, প্রকৃত কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতা এর চেয়ে কম।
পৃথিবীর কক্ষপথে অক্ষীয় ঢালের কারণে, উত্তর অয়নান্তে ২৩.৩° উত্তর অক্ষাংশে (কর্কটক্রান্তি) এবং দক্ষিণ অয়নান্তে ২৩.৩° দক্ষিণ অক্ষাংশে (মকরক্রান্তি) সূর্যের রশ্মির তীব্রতা সর্বাধিক হয়।[১৫]
Comments
Post a Comment