সিরাজউদ্দউলার সেনাপ্রধান মীর জাফর আলী খান
মীর জাফর আলী খান
ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম নবাব এবং নবাব সিরাজউদ্দউলার সেনাপ্রধান
মীর জাফর, যাঁর সম্পূর্ণ নাম সৈয়দ মীর জাফর আলী খান[১] (জন্ম: ১৬৯১- মৃত্যু: ৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৬৫), ইংরেজ প্রভাবিত বাংলার একজন নবাব। তার শাসনামল ভারতে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার শুরু এবং সমগ্র উপমহাদেশে ব্রিটিশ সম্রাজ্য বিস্তারের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভূতপূর্ব নবাব সিরাজউদ্দৌলা নদীয়ার পলাশীর কাছে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। মীর জাফর ছিলেন উক্ত যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। তার অধীনের সৈন্যবাহিনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য নবাবকে পরাজয় বরণ করতে হয়। ইংরেজদের সাথে মীর জাফরের পূর্বেই এই মর্মে একটি চুক্তি ছিল যে, যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হলে মীর জাফর হবেন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব। বিনিময়ে মীর জাফর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে পাঁচ লক্ষ পাউন্ড ও কলকাতায় বসবাসকারী ইউরোপীয়দের আড়াই লক্ষ পাউন্ড প্রদান করবেন।[২] ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত, সিংহাসনচ্যুত ও নিহত হলে মীর জাফর বাংলার নবাব হন। কিন্তু ব্রিটিশদের দাবিকৃত বিপুল অর্থের যোগান দিতে তিনি সমর্থ হননি। ১৭৫৮ সালে রবার্ট ক্লাইভ তার প্রতিনিধি খোজা ওয়াজিদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, মীর জাফর চিনশুরায় ওলন্দাজদের সাথে একটি চুক্তি করেছেন। হুগলি নদীতে ওলন্দাজ জাহাজের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। এসব কিছু চুঁচুড়া যুদ্ধের পটভূমি সৃষ্টি করে।
মীর জাফর
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব
সুজা উল-মুলক (দেশ নায়ক)
হাশিম উদ-দৌলা (রাষ্ট্রের তরবারি)
জাফর আলী খান বাহাদুর
মাহাবাত জঙ্গ (যুদ্ধের নায়ক)
মীর জাফর (বামে) এবং তাঁর পুত্র মীর মিরন (ডানে)
রাজত্বকাল
১৭৫৭–১৭৬০ এবং ১৭৬৩–১৭৬৫
পূর্ণ নাম
মীর মুহম্মদ জাফর আলী খান বাহাদুর
জন্ম
১৬৯১
মৃত্যু
৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৬৫ (৭৪ বছর)
সমাধিস্থল
জাফরগঞ্জ সমাধিক্ষেত্র, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পূর্বসূরি
সিরাজউদ্দৌলা (১৭৫৭ সালের পর) এবং মীর কাশিম (১৭৬৩ সালের পর)
উত্তরসূরি
মীর কাশিম (১৭৬০ সালের পর) এবং নাজিম উদ্দিন আলী খান (১৭৬৫ সালের পর)
দাম্পত্যসঙ্গীরা
শাহ খানুম সাহিবা (বিবাহ: ১৭২৭, মৃত্যু: আগস্ট ১৭৭৯)
মুন্নী বেগম (বিবাহ: ১৭৪৬, মৃত্যু: ১০ জানুয়ারি ১৮১৩)
রাহাত-উন-নিসা বেগম (মুত'আহ স্ত্রী)
বাব্বু বেগম (মৃত্যু: ১৮০৯)
সন্তানাদি
সাদিক আলী খান বাহাদুর (মীর মিরন)
নাজিম উদ্দিন আলী খান
নাজাবুত আলী খান (মীর ফুলওয়ারি)
আশরাফ আলী খান
মুবারক আলী খান
হাদী আলী খান
ফাতিমা বেগম
মিসরি বেগম
রোশান-উন-নিসা বেগম (নিশানি বেগম)
হুসাইনি বেগম
আরো দুই কন্যা
রাজবংশ
নাজাফি
পিতা
সৈয়দ আহমেদ নাজাফি (মীর মিরাক)
ধর্মবিশ্বাস
শিয়া ইসলাম
ব্রিটিশ কর্মকর্তা হেনরী ভেন্সিটার্ট মীর জাফরের কাজে সহায়তা করার জন্য তার জামাতা মীর কাশিমকে বাংলার সহকারী সুবাদার নিয়োগ করার জন্য প্রস্তাব করেন। ১৭৬০ সালে কোম্পানি মীর জাফরকে মীর কাশিমের নিকট ক্ষমতা অর্পণ করতে বাধ্য করে। মীর কাশিম ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তি এবং তিনি বাংলাকে স্বাধীনভাবে শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। ফলশ্রুতিতে ইংরেজদের সাথে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং ১৭৬৩ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পুনরায় মীর জাফরকে নবাব করা হয়। ক্ষমতাচ্যুত নবাব এই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। বরং তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মীর জাফর ১৭৬৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জাফরগঞ্জ কবরস্থানে তার সমাধি আছে।[৩] বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে মীর জাফর নামটি বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।মুর্শিদাবাদের তার বাড়িটি নিমক হারাম দেউরি(বিশ্বাসঘাতকের ঘর) নামে পরিচিত।মীরজাফর এতটাই বিশ্বাসঘাতক ছিল যে এখনও যেকেউ অবিশ্বাসী হলে তাকে মীরজাফরের সাথে তুলনা করা হয়| মীর জাফর আলী খানের জন্ম ১৬৯১ সালে কুমিল্লা জেলায়।
পরিচিতি সম্পাদনা
মীর জাফরের পিতার নাম সৈয়দ আহমেদ নাজাফি। মীর জাফর ছিলেন ইরানি বংশোদ্ভূত। তিনি তার বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন।
আলীবর্দী খানের অধীনে কর্মজীবন সম্পাদনা
মীর জাফর পারস্য থেকে নি:স্ব অবস্থায় ভাগ্যান্বেষণে বাংলায় আসেন এবং বিহারের নায়েব নাযিম আলীবর্দী খানের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন।
গিরিয়ার যুদ্ধ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: গিরিয়ার যুদ্ধ (১৭৪০)
১৭৪০ সালে সংঘটিত গিরিয়ার যুদ্ধে মীর জাফর আলীবর্দী খানের হয়ে নবাব সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং খ্যাতি লাভ করেন। আলীবর্দী নবাব হওয়ার পর মীর জাফরকে তার কৃতিত্বের জন্য মনসবদার পদ প্রদান করেন এবং মীর জাফরের তার বেতন হয় মাসে ১০০ টাকা। নবাব আলীবর্দী তার বৈমাত্রেয় বোন শাহ খানুমকে মীর জাফরের সঙ্গে বিবাহ দেন[৪]। পরবর্তীতে মীর জাফর নবাবের পুরাতন সৈন্যদলের প্রধান 'বখশী' বা প্রধান সেনাপতির পদ লাভ করেন[৪]।
মারাঠাদের বিরুদ্ধে লড়াই সম্পাদনা
মূল নিবন্ধসমূহ: বর্গির হাঙ্গামা, বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৫–১৭৪৯) এবং বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৯–১৭৫১)
যুদ্ধের প্রথম পর্যায় সম্পাদনা
১৭৪১ সাল থেকে মারাঠারা বাংলায় আক্রমণ করে লুটতরাজ চালাতে থাকে এবং পরবর্তী দীর্ঘ দশ বছরব্যাপী মারাঠাদের আক্রমণ চলতে থাকে[৪][৫]। ফলে নবাব আলীবর্দীকে বিরামহীনভাবে মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়। মীর জাফর মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে সেনানায়ক হিসেবে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৭৪১ সালের ডিসেম্বরে মীর জাফর মারাঠা বাহিনীকে পরাজিত করে উড়িষ্যার বড়বাটি দুর্গ দখল করেন এবং সেখানে সপরিবারে মারাঠাদের হাতে বন্দি উড়িষ্যার নায়েব নাযিম (এবং আলীবর্দীর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা) সৈয়দ আহমদ খানকে মুক্ত করেন[৪]। মারাঠাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী অভিযানগুলোতেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৭৪৬ সালের ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে একটি বৃহৎ যুদ্ধে মীর জাফর মারাঠা বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেন[৫] এবং এজন্য নবাব আলীবর্দী তাকে উড়িষ্যার নায়েব নাযিম পদ প্রদান করেন। মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করে মীর জাফর ক্রমশ উচ্চাভিলাষী ও ক্ষমতালোভী হয়ে পড়েন[৪]।
যুদ্ধের শেষ পর্যায় সম্পাদনা
মেদিনীপুরে মীর জাফরের সাফল্য লাভের সংবাদে মীর হাবিব ও জানুজী ভোঁসলের নেতৃত্বে একটি সুবৃহৎ মারাঠা বাহিনী উড়িষ্যা থেকে মেদিনীপুরের দিকে অগ্রসর হয়। এতে ভয় পেয়ে মীর জাফর পালিয়ে যান এবং বর্ধমানে আশ্রয় নেন[৪]। তখন আলীবর্দী মীর জাফরকে সহায়তা করার জন্য সৈন্যসহ আতাউল্লাহ খানকে প্রেরণ করেন। কিন্তু মীর জাফর ও আতাউল্লাহ মারাঠাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর না হয়ে আলীবর্দীকে হত্যা করার ও তার রাজ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন[৪]। ফলে আলীবর্দী নিজেই সসৈন্যে অগ্রসর হন। মীর জাফর তার পলায়নের জন্য অনুতপ্ত না হয়ে নবাবের প্রতি উদ্ধত আচরণ করলে নবাব তাকে পদচ্যুত করেন[৪]। অবশ্য পরবর্তীতে তাকে আবার পূর্বপদে বহাল করা হয়। কিন্তু মীর জাফর এসময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ১৭৫০ সালে মীর জাফরের দুর্নীতির নানা তথ্য প্রকাশিত হলে নবাব তাকে ভর্ৎসনা করেন এবং মীর জাফরের ওপর নজর রাখার জন্য মীর জাফরের ভাই মির্জা ইসমাইলের পরিবর্তে খাজা আব্দুল হাদীকে সহকারী প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন।
যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মীর জাফর যেরূপ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, শেষের দিকে সে কৃতিত্ব ধরে রাখতে পারেন নি। ১৭৫০ সালে নবাব আলীবর্দী গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে মীর জাফর ও রায় দুর্লভকে মারাঠাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তারা নিশ্চেষ্টভাবে সময়ক্ষেপ করতে থাকেন[৪] এবং অবশেষে বৃদ্ধ নবাবকেই মারাঠাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে হয়।
শান্তি স্থাপন সম্পাদনা
দীর্ঘ দশ বছর সংঘর্ষের ফলে উভয়পক্ষই ক্রমশ ক্লান্ত ও অধৈর্য হয়ে পড়েছিল। ১৭৫১ সালের মে মাসে মারাঠা নেতা রঘুজী ভোঁসলে ও মীর হাবিব মীর জাফরের মাধ্যমে নবাব আলীবর্দীকে সন্ধির প্রস্তাব দেন[৪]। আলীবর্দী সন্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলায় মারাঠা আক্রমণের অবসান ঘটে। মীর জাফর নবাবের প্রধান সেনাপতির পদে বহাল থাকেন।
সিরাজউদ্দৌলার অধীনে কর্মজীবন সম্পাদনা
নবাব আলীবর্দী খান তার দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলার নবাব করায় ক্ষুব্ধ হন মীর জাফর। তাই তিনি প্রধান সেনাপতি হয়েও কখনোই সিরাজউদ্দৌলাকে নবাব হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি। সব সময় তিনি চেয়েছেন বাংলার নবাবের পতন। বিশ্বাসঘাতকতা করে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ এর সাথে তিনি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন, এবং পলাশীর যুদ্ধে মূলত তার কারণেই ব্রিটিশদের হাতে সিরাজদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। এই বিশ্বাসঘাতী ষড়যন্ত্রে ইয়ার লতিফ, জগত শেঠ, রায় দুর্লভ, উঁমিচাদ প্রমুখ সামিল ছিল। এই যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীরজাফরকে নবাবের মসনদে অধিষ্ঠিত করে।[৩]
মীরজাফরের বাড়ি, মুর্শিদাবাদ(নিমকহারাম দেউড়ী)
পলাশীর যুদ্ধ সম্পাদনা
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকানন১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজ বেনিয়াদের সঙ্গে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদের লড়াই হয়। এই যুদ্ধে নবাবের পক্ষে স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে প্রধান সেনাপতি ছিলেন মীরজাফর আলী খান। তার সঙ্গে ছিলেন গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান বকশী মীরমদন আর সেনাপতি দেওয়ান মোহনলাল। তারা দুজনেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়াই করে পরাজিত হন। আর যুদ্ধের ময়দানে নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খান ও তার দোসররা ধূর্ত ইংরেজ বেনিয়া লর্ড ক্লাইভের হাতে বাংলার শাসন ক্ষমতা তুলে দেয়। পরাজিত হন বাংলা, বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। মুষ্টিমেয় ইংরেজ শাসক বিশ্বাসঘাতকদের সহায়তায় বাংলায় তাদের শাসন ক্ষমতা পোক্ত করে এবং সোয়া দুইশ বছর এদেশ শাসন করে।[৩] সেই থেকেই মীরজাফরের নাম বিশ্বাসঘাতকতার রূপক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। মুর্শিদাবাদে তার বাড়িটি নিমকহারাম দেউড়ি নামে পরিচিত।
বাংলার নবাব সম্পাদনা
মীর জাফর ও তার পুত্র মীর মিরান ১৭৫৭ সালে ইউলিয়াম ওয়াটস এর নিকট চুক্তিপত্র প্রদান করছেন।
মীর জাফর আলীবর্দী খানের উত্তর সূরী নবাব সিরাজ উদ্দৌলার প্রতি কপট আনুগত্য দেখাতেন। পলাশীর যুদ্ধে তিনি নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের পক্ষ অবলম্বন করেন।[৬] কোম্পানির অতিরিক্ত অর্থের চাহিদা পূরনে ব্যর্থ হলে মীর কাশিমকে কিছু দিনের জন্য নবাব করা হয়। মীর কাশিম ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা নবাব। তিনি বাংলার শাসন ক্ষমতায় ইংরেজদের হস্তক্ষেপ মেনে নিতে চাননি। তিনি অযোধ্যার নবাব, এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাথে একটি সামরিক মৈত্রি চুক্তি করেন। ২২ শে অক্টোবর ১৭৬৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে বক্সারের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধে নবাবের সম্মিলিত বাহিনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্যবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এরপর মীর জাফরকে পুনরায় নবাব হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম নবাব এবং নবাব সিরাজউদ্দউলার সেনাপ্রধান
মীর জাফর, যাঁর সম্পূর্ণ নাম সৈয়দ মীর জাফর আলী খান[১] (জন্ম: ১৬৯১- মৃত্যু: ৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৬৫), ইংরেজ প্রভাবিত বাংলার একজন নবাব। তার শাসনামল ভারতে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠার শুরু এবং সমগ্র উপমহাদেশে ব্রিটিশ সম্রাজ্য বিস্তারের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভূতপূর্ব নবাব সিরাজউদ্দৌলা নদীয়ার পলাশীর কাছে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন। মীর জাফর ছিলেন উক্ত যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। তার অধীনের সৈন্যবাহিনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার জন্য নবাবকে পরাজয় বরণ করতে হয়। ইংরেজদের সাথে মীর জাফরের পূর্বেই এই মর্মে একটি চুক্তি ছিল যে, যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হলে মীর জাফর হবেন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব। বিনিময়ে মীর জাফর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে পাঁচ লক্ষ পাউন্ড ও কলকাতায় বসবাসকারী ইউরোপীয়দের আড়াই লক্ষ পাউন্ড প্রদান করবেন।[২] ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত, সিংহাসনচ্যুত ও নিহত হলে মীর জাফর বাংলার নবাব হন। কিন্তু ব্রিটিশদের দাবিকৃত বিপুল অর্থের যোগান দিতে তিনি সমর্থ হননি। ১৭৫৮ সালে রবার্ট ক্লাইভ তার প্রতিনিধি খোজা ওয়াজিদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, মীর জাফর চিনশুরায় ওলন্দাজদের সাথে একটি চুক্তি করেছেন। হুগলি নদীতে ওলন্দাজ জাহাজের আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। এসব কিছু চুঁচুড়া যুদ্ধের পটভূমি সৃষ্টি করে।
মীর জাফর
বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব
সুজা উল-মুলক (দেশ নায়ক)
হাশিম উদ-দৌলা (রাষ্ট্রের তরবারি)
জাফর আলী খান বাহাদুর
মাহাবাত জঙ্গ (যুদ্ধের নায়ক)
মীর জাফর (বামে) এবং তাঁর পুত্র মীর মিরন (ডানে)
রাজত্বকাল
১৭৫৭–১৭৬০ এবং ১৭৬৩–১৭৬৫
পূর্ণ নাম
মীর মুহম্মদ জাফর আলী খান বাহাদুর
জন্ম
১৬৯১
মৃত্যু
৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৬৫ (৭৪ বছর)
সমাধিস্থল
জাফরগঞ্জ সমাধিক্ষেত্র, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পূর্বসূরি
সিরাজউদ্দৌলা (১৭৫৭ সালের পর) এবং মীর কাশিম (১৭৬৩ সালের পর)
উত্তরসূরি
মীর কাশিম (১৭৬০ সালের পর) এবং নাজিম উদ্দিন আলী খান (১৭৬৫ সালের পর)
দাম্পত্যসঙ্গীরা
শাহ খানুম সাহিবা (বিবাহ: ১৭২৭, মৃত্যু: আগস্ট ১৭৭৯)
মুন্নী বেগম (বিবাহ: ১৭৪৬, মৃত্যু: ১০ জানুয়ারি ১৮১৩)
রাহাত-উন-নিসা বেগম (মুত'আহ স্ত্রী)
বাব্বু বেগম (মৃত্যু: ১৮০৯)
সন্তানাদি
সাদিক আলী খান বাহাদুর (মীর মিরন)
নাজিম উদ্দিন আলী খান
নাজাবুত আলী খান (মীর ফুলওয়ারি)
আশরাফ আলী খান
মুবারক আলী খান
হাদী আলী খান
ফাতিমা বেগম
মিসরি বেগম
রোশান-উন-নিসা বেগম (নিশানি বেগম)
হুসাইনি বেগম
আরো দুই কন্যা
রাজবংশ
নাজাফি
পিতা
সৈয়দ আহমেদ নাজাফি (মীর মিরাক)
ধর্মবিশ্বাস
শিয়া ইসলাম
ব্রিটিশ কর্মকর্তা হেনরী ভেন্সিটার্ট মীর জাফরের কাজে সহায়তা করার জন্য তার জামাতা মীর কাশিমকে বাংলার সহকারী সুবাদার নিয়োগ করার জন্য প্রস্তাব করেন। ১৭৬০ সালে কোম্পানি মীর জাফরকে মীর কাশিমের নিকট ক্ষমতা অর্পণ করতে বাধ্য করে। মীর কাশিম ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তি এবং তিনি বাংলাকে স্বাধীনভাবে শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। ফলশ্রুতিতে ইংরেজদের সাথে তার দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং ১৭৬৩ সালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পুনরায় মীর জাফরকে নবাব করা হয়। ক্ষমতাচ্যুত নবাব এই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি। বরং তিনি কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মীর জাফর ১৭৬৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জাফরগঞ্জ কবরস্থানে তার সমাধি আছে।[৩] বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে মীর জাফর নামটি বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।মুর্শিদাবাদের তার বাড়িটি নিমক হারাম দেউরি(বিশ্বাসঘাতকের ঘর) নামে পরিচিত।মীরজাফর এতটাই বিশ্বাসঘাতক ছিল যে এখনও যেকেউ অবিশ্বাসী হলে তাকে মীরজাফরের সাথে তুলনা করা হয়| মীর জাফর আলী খানের জন্ম ১৬৯১ সালে কুমিল্লা জেলায়।
পরিচিতি সম্পাদনা
মীর জাফরের পিতার নাম সৈয়দ আহমেদ নাজাফি। মীর জাফর ছিলেন ইরানি বংশোদ্ভূত। তিনি তার বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন।
আলীবর্দী খানের অধীনে কর্মজীবন সম্পাদনা
মীর জাফর পারস্য থেকে নি:স্ব অবস্থায় ভাগ্যান্বেষণে বাংলায় আসেন এবং বিহারের নায়েব নাযিম আলীবর্দী খানের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন।
গিরিয়ার যুদ্ধ সম্পাদনা
মূল নিবন্ধ: গিরিয়ার যুদ্ধ (১৭৪০)
১৭৪০ সালে সংঘটিত গিরিয়ার যুদ্ধে মীর জাফর আলীবর্দী খানের হয়ে নবাব সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং খ্যাতি লাভ করেন। আলীবর্দী নবাব হওয়ার পর মীর জাফরকে তার কৃতিত্বের জন্য মনসবদার পদ প্রদান করেন এবং মীর জাফরের তার বেতন হয় মাসে ১০০ টাকা। নবাব আলীবর্দী তার বৈমাত্রেয় বোন শাহ খানুমকে মীর জাফরের সঙ্গে বিবাহ দেন[৪]। পরবর্তীতে মীর জাফর নবাবের পুরাতন সৈন্যদলের প্রধান 'বখশী' বা প্রধান সেনাপতির পদ লাভ করেন[৪]।
মারাঠাদের বিরুদ্ধে লড়াই সম্পাদনা
মূল নিবন্ধসমূহ: বর্গির হাঙ্গামা, বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৫–১৭৪৯) এবং বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৯–১৭৫১)
যুদ্ধের প্রথম পর্যায় সম্পাদনা
১৭৪১ সাল থেকে মারাঠারা বাংলায় আক্রমণ করে লুটতরাজ চালাতে থাকে এবং পরবর্তী দীর্ঘ দশ বছরব্যাপী মারাঠাদের আক্রমণ চলতে থাকে[৪][৫]। ফলে নবাব আলীবর্দীকে বিরামহীনভাবে মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে হয়। মীর জাফর মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে সেনানায়ক হিসেবে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৭৪১ সালের ডিসেম্বরে মীর জাফর মারাঠা বাহিনীকে পরাজিত করে উড়িষ্যার বড়বাটি দুর্গ দখল করেন এবং সেখানে সপরিবারে মারাঠাদের হাতে বন্দি উড়িষ্যার নায়েব নাযিম (এবং আলীবর্দীর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা) সৈয়দ আহমদ খানকে মুক্ত করেন[৪]। মারাঠাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী অভিযানগুলোতেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৭৪৬ সালের ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে একটি বৃহৎ যুদ্ধে মীর জাফর মারাঠা বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেন[৫] এবং এজন্য নবাব আলীবর্দী তাকে উড়িষ্যার নায়েব নাযিম পদ প্রদান করেন। মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্রমাগত সাফল্য অর্জন করে মীর জাফর ক্রমশ উচ্চাভিলাষী ও ক্ষমতালোভী হয়ে পড়েন[৪]।
যুদ্ধের শেষ পর্যায় সম্পাদনা
মেদিনীপুরে মীর জাফরের সাফল্য লাভের সংবাদে মীর হাবিব ও জানুজী ভোঁসলের নেতৃত্বে একটি সুবৃহৎ মারাঠা বাহিনী উড়িষ্যা থেকে মেদিনীপুরের দিকে অগ্রসর হয়। এতে ভয় পেয়ে মীর জাফর পালিয়ে যান এবং বর্ধমানে আশ্রয় নেন[৪]। তখন আলীবর্দী মীর জাফরকে সহায়তা করার জন্য সৈন্যসহ আতাউল্লাহ খানকে প্রেরণ করেন। কিন্তু মীর জাফর ও আতাউল্লাহ মারাঠাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর না হয়ে আলীবর্দীকে হত্যা করার ও তার রাজ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন[৪]। ফলে আলীবর্দী নিজেই সসৈন্যে অগ্রসর হন। মীর জাফর তার পলায়নের জন্য অনুতপ্ত না হয়ে নবাবের প্রতি উদ্ধত আচরণ করলে নবাব তাকে পদচ্যুত করেন[৪]। অবশ্য পরবর্তীতে তাকে আবার পূর্বপদে বহাল করা হয়। কিন্তু মীর জাফর এসময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ১৭৫০ সালে মীর জাফরের দুর্নীতির নানা তথ্য প্রকাশিত হলে নবাব তাকে ভর্ৎসনা করেন এবং মীর জাফরের ওপর নজর রাখার জন্য মীর জাফরের ভাই মির্জা ইসমাইলের পরিবর্তে খাজা আব্দুল হাদীকে সহকারী প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন।
যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মীর জাফর যেরূপ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন, শেষের দিকে সে কৃতিত্ব ধরে রাখতে পারেন নি। ১৭৫০ সালে নবাব আলীবর্দী গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে মীর জাফর ও রায় দুর্লভকে মারাঠাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু তারা নিশ্চেষ্টভাবে সময়ক্ষেপ করতে থাকেন[৪] এবং অবশেষে বৃদ্ধ নবাবকেই মারাঠাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে হয়।
শান্তি স্থাপন সম্পাদনা
দীর্ঘ দশ বছর সংঘর্ষের ফলে উভয়পক্ষই ক্রমশ ক্লান্ত ও অধৈর্য হয়ে পড়েছিল। ১৭৫১ সালের মে মাসে মারাঠা নেতা রঘুজী ভোঁসলে ও মীর হাবিব মীর জাফরের মাধ্যমে নবাব আলীবর্দীকে সন্ধির প্রস্তাব দেন[৪]। আলীবর্দী সন্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলায় মারাঠা আক্রমণের অবসান ঘটে। মীর জাফর নবাবের প্রধান সেনাপতির পদে বহাল থাকেন।
সিরাজউদ্দৌলার অধীনে কর্মজীবন সম্পাদনা
নবাব আলীবর্দী খান তার দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলাকে বাংলার নবাব করায় ক্ষুব্ধ হন মীর জাফর। তাই তিনি প্রধান সেনাপতি হয়েও কখনোই সিরাজউদ্দৌলাকে নবাব হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি। সব সময় তিনি চেয়েছেন বাংলার নবাবের পতন। বিশ্বাসঘাতকতা করে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রবার্ট ক্লাইভ এর সাথে তিনি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন, এবং পলাশীর যুদ্ধে মূলত তার কারণেই ব্রিটিশদের হাতে সিরাজদ্দৌলার পরাজয় ঘটে। এই বিশ্বাসঘাতী ষড়যন্ত্রে ইয়ার লতিফ, জগত শেঠ, রায় দুর্লভ, উঁমিচাদ প্রমুখ সামিল ছিল। এই যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মীরজাফরকে নবাবের মসনদে অধিষ্ঠিত করে।[৩]
মীরজাফরের বাড়ি, মুর্শিদাবাদ(নিমকহারাম দেউড়ী)
পলাশীর যুদ্ধ সম্পাদনা
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকানন১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজ বেনিয়াদের সঙ্গে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সৈন্যদের লড়াই হয়। এই যুদ্ধে নবাবের পক্ষে স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে প্রধান সেনাপতি ছিলেন মীরজাফর আলী খান। তার সঙ্গে ছিলেন গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান বকশী মীরমদন আর সেনাপতি দেওয়ান মোহনলাল। তারা দুজনেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়াই করে পরাজিত হন। আর যুদ্ধের ময়দানে নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খান ও তার দোসররা ধূর্ত ইংরেজ বেনিয়া লর্ড ক্লাইভের হাতে বাংলার শাসন ক্ষমতা তুলে দেয়। পরাজিত হন বাংলা, বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। মুষ্টিমেয় ইংরেজ শাসক বিশ্বাসঘাতকদের সহায়তায় বাংলায় তাদের শাসন ক্ষমতা পোক্ত করে এবং সোয়া দুইশ বছর এদেশ শাসন করে।[৩] সেই থেকেই মীরজাফরের নাম বিশ্বাসঘাতকতার রূপক হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। মুর্শিদাবাদে তার বাড়িটি নিমকহারাম দেউড়ি নামে পরিচিত।
বাংলার নবাব সম্পাদনা
মীর জাফর ও তার পুত্র মীর মিরান ১৭৫৭ সালে ইউলিয়াম ওয়াটস এর নিকট চুক্তিপত্র প্রদান করছেন।
মীর জাফর আলীবর্দী খানের উত্তর সূরী নবাব সিরাজ উদ্দৌলার প্রতি কপট আনুগত্য দেখাতেন। পলাশীর যুদ্ধে তিনি নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের পক্ষ অবলম্বন করেন।[৬] কোম্পানির অতিরিক্ত অর্থের চাহিদা পূরনে ব্যর্থ হলে মীর কাশিমকে কিছু দিনের জন্য নবাব করা হয়। মীর কাশিম ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা নবাব। তিনি বাংলার শাসন ক্ষমতায় ইংরেজদের হস্তক্ষেপ মেনে নিতে চাননি। তিনি অযোধ্যার নবাব, এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সাথে একটি সামরিক মৈত্রি চুক্তি করেন। ২২ শে অক্টোবর ১৭৬৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে বক্সারের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধে নবাবের সম্মিলিত বাহিনী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সৈন্যবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এরপর মীর জাফরকে পুনরায় নবাব হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
Comments
Post a Comment