আঙুরের উপকারিতাঃ আপনার স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের যত্নে(grapes ki upkarita)
আঙুরের উপকারিতাঃ আপনার স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের যত্নে
একটা ফল যা সবার খুব প্রিয় বা পছন্দের, তা হল আঙুর। যখন আমি ছোট ছিলাম এমন অনেক ফল ছিল যা খুশি মনে খেতাম না। মা – বাবা জোড় করে প্রায় বেশির ভাগ সময় খাওয়াতো। কিন্তু মা যখনই এক গোছা আঙুর হাতে ধরিয়ে দিত, তখনই খুশি মনে খেয়ে নিতাম। বিশেষ করে টিভি দেখতে দেখতে আঙুর খাওয়ার মজাই আলাদা।
আঙুর স্বাদে যতটা ভালো তার চেয়েও দ্বিগুণ এর উপকারিতা। চলুন আজ এই বিষয়ের উপর আলোচনা করা যাক।
আঙুর পুষ্টিকর পদার্থে সমৃদ্ধ, বলতে পারেন খাজানা
সবুজ আঙুর যা সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়, তার পৌষ্টিকতা দেখুন। ১০০ গ্রাম আঙুরে আপনারা পানঃ
সুত্রঃ আমেরিকার কৃষি বিভাগ
• ৬৯ কিলো ক্যালোরি
• ০.৭২ গ্রাম প্রোটিন
• ১৮.১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেড
• ১৮.১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেডের মধ্যে ১৫.৪৮ গ্রাম চিনি রূপে
• ০.৯ গ্রাম ফায়বার
• ০.১৬ মাত্রায় ফ্যাট
১০০ গ্রাম সবুজ আঙুরে খনিজ পদার্থের মাত্রা
• ক্যালসিয়ামঃ ১০ মিলিগ্রাম
• আয়রনঃ ০.৩৬ মিলিগ্রাম
• ম্যাগনেসিয়ামঃ ৭ মিলিগ্রাম
• ফসফরাসঃ ২০ মিলিগ্রাম
• পটাসিয়ামঃ ১৯১ মিলিগ্রাম
• সোডিয়ামঃ ২ মিলিগ্রাম
• জিঙ্কঃ ০.০৭ মিলিগ্রাম
১০০ গ্রাম আঙুরে আলাদা আলাদা ভিটামিনের মাত্রা
• ভিটামিন সিঃ ৩.২ মিলিগ্রাম
• ভিটামিন কেঃ ১৪.৬ মাইক্রোগ্রাম
• কিছু মাত্রায় ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি ৬ থাকে
• এতে কোলেস্টেরল শূন্য মাত্রায় থাকে।
আঙুরের উপকারিতাঃ আপনাদের স্বাস্থ্যের জন্য
১) ক্যান্সারের থেকে সুরক্ষাঃ
আঙুরে থাকা কিছু যৌগিক পদার্থ ক্যান্সের বিরুদ্ধে লড়াই করার পক্ষে সক্ষম। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার কিছু উপাদান আঙুরে রয়েছে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ খাবার ক্যান্সারের প্রতিরোধে সক্ষম বলে জানা গিয়েছে। আঙুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার হিসেবে প্রমাণিত।
২) আঙুর রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ
বাজারে অনেক খাবার আছে যা দাবী করে যে তাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা শূন্য।
আর আঙুরে কোলেস্টেরলের মাত্র যে শূন্য তা প্রমাণিত। তাই খাবারের তালিকায় আজই এই ফলটি যোগ করে নিন।
৩) কিডনির সমস্যা রোধ করেঃ
আঙুর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে কিডনির সমস্যা কম দেখা দেয়।
৪) টক ঢেকুরঃ
খাবার ভালো ভাবে হজম করার ক্ষেত্রে আঙুরের ভূমিকা রয়েছে। ফলে টক ঢেকুর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
বদহজম থেকে মূলত এই সমস্যা হয়। আঙুর খেলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
৫) ভুলে যাওয়া রোগঃ
ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই থাকে আর আঙুর নিয়মিত খেলে তা কম হতে পারে। কারণ আঙুর মস্তিষ্কের মধ্যে পজেটিভ এনার্জি প্রদান করে। নিউরলজিক্যাল নানা সমস্যা থেকে আপনাকে দূরে রাখবে আঙুর।
৬) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ
নুন খেলে ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যায় কারণ এতে অতিরিক্ত মাত্রায় সোডিয়াম থাকে। আর এর ঠিক বিপরীত হল আঙুর। কারণ এতে পটাসিয়াম থাকে ভালো মাত্রায়। যা সোডিয়ামের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
আঙুর খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, কারণ এতে ভরপুর পটাসিয়াম রয়েছে।
৭) কোষ্ঠকাঠিন্যঃ
জল ও ফাইবার আঙুরে রয়েছে বিপুল মাত্রায়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে আপনি অনেক দূরে থাকতে পারেন আঙুর খেলে।
৮) ডায়াবেটিসঃ
২০১৩ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে এমন কিছু ফল আছে যাদের রস পান করলে রক্তে চিনির মাত্রা কম হয়ে টাইপ ২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। আঙুর সেরকম একটি ফল।
৯) চোখের জন্য ভালোঃ
বলা হয় যে আঙুর খেলে তা চোখের জন্য ভালো। গবেষণাতে তা প্রমাণিত। চোখের নানা রকমের রোগের থেকে আঙুর চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
১০) হাঁপানি রোগঃ
হাঁপানির সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য আঙুর ফল খাওয়া খুবই উপকারি। আঙুর ফুসফুসে আদ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ফুসফুস সংক্রমিত হয় না। হাঁপানির সমস্যাও কমে।
আঙুরের উপকারিতাঃ ত্বকের জন্য
১) বয়েসের ছাপঃ
দূর করে সহজেই আঙুর। ত্বকে বয়েসের ছাপ পরলে তা হ্রাস হয় আঙুর খেলে।
২) ব্রণ দূর করতেঃ
সাহায্য করে আঙুর। আঙুরে থাকা একটি যৌগ মুখের থেকে দ্রুত ব্রণ সরিয়ে দেয়। এর সাথে সাথে মুখের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনে।
৩) ত্বক নরম ও মোলায়েম রাখেঃ
ত্বক নরম বা মোলায়েম রাখার জন্য ভিটামিন ই খুবই জরুরি। আর আঙুর ভিটামিন ই তে ভরপুর। ফলে আঙুর খেলে ত্বক সুন্দর ও নরম থাকে।
আরও ভালো হয় আঙুর দিয়ে মুখ ৫ মিনিট মত ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন সপ্তাহে দুবার। দেখবেন মাখনের মত নরম হয়ে গেছে স্কিন।
আঙুরের উপকারিতাঃ চুলের জন্য
১) আঙুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের পুষ্টির জন্য খুবই ভালো।
২) আঙুর চুল পড়া কমায়, চুলের আগা ফাটার সমস্যাও কম করে।
৩) চুলের যত্ন নিতে আঙুরের এই হেয়ার মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেনঃ
কি কি জিনিস লাগবে হেয়ার মাস্ক বানাতে?
• ৫-৬ টা আঙুর
• এক চ-৬ টা আঙুর
• এক চামচ নারকেল তেল
• এক চামচ অলিভ অয়েল
• এক চামচ মধু
• এক চামচ বাদামের গুঁড়ো
আঙুরের হেয়ার মাস্ক
একটি পরিষ্কার বাটিতে প্রথমে ৫ থেকে ৬ টা আঙুর ভালো করে পিষে রস বের করে নিয়ে রাখুন।
এবার এই বাটিতে প্রথমে এক চামচ নারকেল তেল ও এক চামচ অলিভ অয়েল মেশান। ভালো করে মিশিয়ে নিন উপাদানগুলো।
এক চামচ মধু ও বাদামের গুঁড়ো এবার এতে দিন।
রেডি আপনার হেয়ার মাস্ক। চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন তারপর হালকা ম্যাসাজ করুন। ২০ থেকে ২২ মিনিট পর হালকা গরমজলে চুল ধুয়ে নিন।
সপ্তাহে একবার করে এই হেয়ার মাস্কটি ব্যবহার করুন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আঙুরের উপকারিতা নজরে আসবে।
বিশেষ টিপস
• খাওয়ার আগে ভালো করে পরিষ্কার জল দিয়ে আঙুর ধুয়ে নিন।
• আঙুর ফ্রিজে রাখুন। ঠাণ্ডা আঙুর খাওয়ার স্বাদই আলাদা।
• যদি আঙুরের গোছা থেকে আঙুর খাচ্ছেন তাহলে একটি কাঁচি অবশ্যই সাথে রাখুন। তা দিয়ে আঙুর কেটে খান। আঙুরের বোটায় থাকা আঠা ভালো না। তাই হাতে লাগাবেন না।
• আঙুর খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে যা লিখলাম তা সত্যি শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু তাই বলে অতিরিক্ত আঙুর খাবেন না।
• সব জিনিসেরই ভালো খারাপ দিক থাকে। অতিরিক্ত আঙুর কেন খাবেন না |অতিরিক্ত আঙুর খাওয়া কেন ভালো না?
ফলের উপকারিতা আমরা সবাই জানি। ফলে থাকে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ভিটামিন আরও অনেক খাদ্যগুণ যা আমদের প্রতিদিন দরকার। কিন্তু ফল খাবারও কিছু নিয়ম আছে যখন তখন ফল খাওয়া ভালো না। আবার কিছু কিছু ফল অতিরিক্ত খাওয়াও ভালো না। ফলের যেমন ভালো দিক আছে তেমনই কিছু কিছু ফলের কিছু খারাপ দিকও আছে। এরকমই একটি ফল হল আঙুর যা অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। অতিরিক্ত আঙুর খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক আছে যেগুলি হয়তো আমরা তেমন ভাবে জানি না। আসুন জেনে নি কেন অতিরিক্ত আঙুর খাওয়া ভালো না।
অ্যালার্জি
অনেকেরই আঙুরে অ্যালার্জি হয়। আবার খেতেও হয় না, অনেকের আঙুরে হাত দিলেই অ্যালার্জি হয়। আঙুরের কিছু উপাদান অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করে। অনেকের লাল লাল ফুসকুড়ির মত অ্যালার্জি হয়। আবার অনেকের অতিরিক্ত আঙুর খাবার ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও হয়। এছাড়াও হাঁচি হয়। এগুলি সবই আঙুরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এগুলি এক একজনের ওপর এক এক রকম। যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে আঙুর না খাওয়াই ভালো।
ওজন বৃদ্ধি
আঙুরে ক্যালোরি কম থাকে। এক কাপ আঙুরের রসে ১০০ গ্রাম ক্যালোরি থাকে যেটি বেশি না। কিন্তু আঙুর খুব ছোট ফল হবার ফলে আমরা একসঙ্গে অনেক আঙুর নিয়ে খাই। তার ফলে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়। যেটি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। যদি রোজ আঙুর খাওয়া হয় তাহলে অতিরিক্ত ক্যালোরি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রোজ খুব বেশি পরিমাণ আঙুর খেলে এই সমস্যা হতে পারে।
হজমের সমস্যা
আঙুর খেলে অনেকেরই বদহজম হয়। অতিরিক্ত আঙুর খেলে হজমের সমস্যা হয়। আবার এর ফলে ডায়রিয়ার সমস্যাও হতে পারে। পাকা আঙুর ও শুকনো আঙুর দুটিতেই হয়। আঙুরের একটি কমন সাইড এফেক্ট। যাদের ফ্রুকটোজ উপাদানে শরীরে সমস্যা হয় তাদের আঙুর না খাওয়াই ভালো। কারণ আঙুরে থাকা এই উপাদানটি শরীরে নানা সমস্যা, বিশেষত কিডনি ড্যামেজের মত সমস্যাও হতে পারে।
গ্যাস
এখন প্রচুর মানুষ গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন। এর একটি কারণ আঙুরও হতে পারে। এর কারণ আঙুরে থাকা ফ্রুকটোজ। ফ্রুকটোজ এই উপাদানটি সহজে হজম হয় না, আর পেটের ভেতরে গ্যাসের সৃষ্টি করে। এর কারণে গ্যাসের ব্যাথাও হয়। তাই যাদের গ্যাস অম্বলের সমস্যা আছে তাদের আঙুর না খাওয়াই ভালো।
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেড
আঙুরে অতিরিক্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেড থাকে। এই অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেড শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। কার্বোহাইড্রেড আমাদের প্রতিদিন দরকার। কিন্তু অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেড গ্লুকোজে পরিনত হয় এবং এই অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরের জন্য ভালো না। এর ফলেই সুগারের মত সমস্যা হয়।
শরীরে কার্বোহাইড্রেডের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। বেঁচে থাকার জন্য সব উপাদানই দরকার কিন্তু সবটাই পরিমিত হওয়া উচিৎ।
কি ভাবছেন এবার থেকে আর আঙুর খাবেন না? না সেটা একদমই না। আঙুরের খারাপ দিকের সঙ্গে ভালো দিকও আছে। আঙুরে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে বিভিন্ন সমস্যা রোধ করার পাশাপাশি, শরীরকে ফিট রাখার জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান।
তাই খান কিন্তু পরিমাণ বুঝে। ওই যে কথায় বলে না অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভাল না। পরিমান বুঝে খেলে কোন ক্ষতি হবে না। বরং শরীরের ভালোই হবে। তাই ভয় না পেয়ে পরিমাণ বুঝে খান।
একটা ফল যা সবার খুব প্রিয় বা পছন্দের, তা হল আঙুর। যখন আমি ছোট ছিলাম এমন অনেক ফল ছিল যা খুশি মনে খেতাম না। মা – বাবা জোড় করে প্রায় বেশির ভাগ সময় খাওয়াতো। কিন্তু মা যখনই এক গোছা আঙুর হাতে ধরিয়ে দিত, তখনই খুশি মনে খেয়ে নিতাম। বিশেষ করে টিভি দেখতে দেখতে আঙুর খাওয়ার মজাই আলাদা।
আঙুর স্বাদে যতটা ভালো তার চেয়েও দ্বিগুণ এর উপকারিতা। চলুন আজ এই বিষয়ের উপর আলোচনা করা যাক।
আঙুর পুষ্টিকর পদার্থে সমৃদ্ধ, বলতে পারেন খাজানা
সবুজ আঙুর যা সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়, তার পৌষ্টিকতা দেখুন। ১০০ গ্রাম আঙুরে আপনারা পানঃ
সুত্রঃ আমেরিকার কৃষি বিভাগ
• ৬৯ কিলো ক্যালোরি
• ০.৭২ গ্রাম প্রোটিন
• ১৮.১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেড
• ১৮.১০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেডের মধ্যে ১৫.৪৮ গ্রাম চিনি রূপে
• ০.৯ গ্রাম ফায়বার
• ০.১৬ মাত্রায় ফ্যাট
১০০ গ্রাম সবুজ আঙুরে খনিজ পদার্থের মাত্রা
• ক্যালসিয়ামঃ ১০ মিলিগ্রাম
• আয়রনঃ ০.৩৬ মিলিগ্রাম
• ম্যাগনেসিয়ামঃ ৭ মিলিগ্রাম
• ফসফরাসঃ ২০ মিলিগ্রাম
• পটাসিয়ামঃ ১৯১ মিলিগ্রাম
• সোডিয়ামঃ ২ মিলিগ্রাম
• জিঙ্কঃ ০.০৭ মিলিগ্রাম
১০০ গ্রাম আঙুরে আলাদা আলাদা ভিটামিনের মাত্রা
• ভিটামিন সিঃ ৩.২ মিলিগ্রাম
• ভিটামিন কেঃ ১৪.৬ মাইক্রোগ্রাম
• কিছু মাত্রায় ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি ৬ থাকে
• এতে কোলেস্টেরল শূন্য মাত্রায় থাকে।
আঙুরের উপকারিতাঃ আপনাদের স্বাস্থ্যের জন্য
১) ক্যান্সারের থেকে সুরক্ষাঃ
আঙুরে থাকা কিছু যৌগিক পদার্থ ক্যান্সের বিরুদ্ধে লড়াই করার পক্ষে সক্ষম। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার কিছু উপাদান আঙুরে রয়েছে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমূহ খাবার ক্যান্সারের প্রতিরোধে সক্ষম বলে জানা গিয়েছে। আঙুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার হিসেবে প্রমাণিত।
২) আঙুর রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ
বাজারে অনেক খাবার আছে যা দাবী করে যে তাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা শূন্য।
আর আঙুরে কোলেস্টেরলের মাত্র যে শূন্য তা প্রমাণিত। তাই খাবারের তালিকায় আজই এই ফলটি যোগ করে নিন।
৩) কিডনির সমস্যা রোধ করেঃ
আঙুর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে কিডনির সমস্যা কম দেখা দেয়।
৪) টক ঢেকুরঃ
খাবার ভালো ভাবে হজম করার ক্ষেত্রে আঙুরের ভূমিকা রয়েছে। ফলে টক ঢেকুর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।
বদহজম থেকে মূলত এই সমস্যা হয়। আঙুর খেলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
৫) ভুলে যাওয়া রোগঃ
ভুলে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই থাকে আর আঙুর নিয়মিত খেলে তা কম হতে পারে। কারণ আঙুর মস্তিষ্কের মধ্যে পজেটিভ এনার্জি প্রদান করে। নিউরলজিক্যাল নানা সমস্যা থেকে আপনাকে দূরে রাখবে আঙুর।
৬) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ
নুন খেলে ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যায় কারণ এতে অতিরিক্ত মাত্রায় সোডিয়াম থাকে। আর এর ঠিক বিপরীত হল আঙুর। কারণ এতে পটাসিয়াম থাকে ভালো মাত্রায়। যা সোডিয়ামের ক্ষতিকর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
আঙুর খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, কারণ এতে ভরপুর পটাসিয়াম রয়েছে।
৭) কোষ্ঠকাঠিন্যঃ
জল ও ফাইবার আঙুরে রয়েছে বিপুল মাত্রায়। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থেকে আপনি অনেক দূরে থাকতে পারেন আঙুর খেলে।
৮) ডায়াবেটিসঃ
২০১৩ সালের একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে এমন কিছু ফল আছে যাদের রস পান করলে রক্তে চিনির মাত্রা কম হয়ে টাইপ ২ ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। আঙুর সেরকম একটি ফল।
৯) চোখের জন্য ভালোঃ
বলা হয় যে আঙুর খেলে তা চোখের জন্য ভালো। গবেষণাতে তা প্রমাণিত। চোখের নানা রকমের রোগের থেকে আঙুর চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
১০) হাঁপানি রোগঃ
হাঁপানির সমস্যা যাদের আছে তাদের জন্য আঙুর ফল খাওয়া খুবই উপকারি। আঙুর ফুসফুসে আদ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ফুসফুস সংক্রমিত হয় না। হাঁপানির সমস্যাও কমে।
আঙুরের উপকারিতাঃ ত্বকের জন্য
১) বয়েসের ছাপঃ
দূর করে সহজেই আঙুর। ত্বকে বয়েসের ছাপ পরলে তা হ্রাস হয় আঙুর খেলে।
২) ব্রণ দূর করতেঃ
সাহায্য করে আঙুর। আঙুরে থাকা একটি যৌগ মুখের থেকে দ্রুত ব্রণ সরিয়ে দেয়। এর সাথে সাথে মুখের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনে।
৩) ত্বক নরম ও মোলায়েম রাখেঃ
ত্বক নরম বা মোলায়েম রাখার জন্য ভিটামিন ই খুবই জরুরি। আর আঙুর ভিটামিন ই তে ভরপুর। ফলে আঙুর খেলে ত্বক সুন্দর ও নরম থাকে।
আরও ভালো হয় আঙুর দিয়ে মুখ ৫ মিনিট মত ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন সপ্তাহে দুবার। দেখবেন মাখনের মত নরম হয়ে গেছে স্কিন।
আঙুরের উপকারিতাঃ চুলের জন্য
১) আঙুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের পুষ্টির জন্য খুবই ভালো।
২) আঙুর চুল পড়া কমায়, চুলের আগা ফাটার সমস্যাও কম করে।
৩) চুলের যত্ন নিতে আঙুরের এই হেয়ার মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেনঃ
কি কি জিনিস লাগবে হেয়ার মাস্ক বানাতে?
• ৫-৬ টা আঙুর
• এক চ-৬ টা আঙুর
• এক চামচ নারকেল তেল
• এক চামচ অলিভ অয়েল
• এক চামচ মধু
• এক চামচ বাদামের গুঁড়ো
আঙুরের হেয়ার মাস্ক
একটি পরিষ্কার বাটিতে প্রথমে ৫ থেকে ৬ টা আঙুর ভালো করে পিষে রস বের করে নিয়ে রাখুন।
এবার এই বাটিতে প্রথমে এক চামচ নারকেল তেল ও এক চামচ অলিভ অয়েল মেশান। ভালো করে মিশিয়ে নিন উপাদানগুলো।
এক চামচ মধু ও বাদামের গুঁড়ো এবার এতে দিন।
রেডি আপনার হেয়ার মাস্ক। চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন তারপর হালকা ম্যাসাজ করুন। ২০ থেকে ২২ মিনিট পর হালকা গরমজলে চুল ধুয়ে নিন।
সপ্তাহে একবার করে এই হেয়ার মাস্কটি ব্যবহার করুন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আঙুরের উপকারিতা নজরে আসবে।
বিশেষ টিপস
• খাওয়ার আগে ভালো করে পরিষ্কার জল দিয়ে আঙুর ধুয়ে নিন।
• আঙুর ফ্রিজে রাখুন। ঠাণ্ডা আঙুর খাওয়ার স্বাদই আলাদা।
• যদি আঙুরের গোছা থেকে আঙুর খাচ্ছেন তাহলে একটি কাঁচি অবশ্যই সাথে রাখুন। তা দিয়ে আঙুর কেটে খান। আঙুরের বোটায় থাকা আঠা ভালো না। তাই হাতে লাগাবেন না।
• আঙুর খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে যা লিখলাম তা সত্যি শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু তাই বলে অতিরিক্ত আঙুর খাবেন না।
• সব জিনিসেরই ভালো খারাপ দিক থাকে। অতিরিক্ত আঙুর কেন খাবেন না |অতিরিক্ত আঙুর খাওয়া কেন ভালো না?
ফলের উপকারিতা আমরা সবাই জানি। ফলে থাকে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ভিটামিন আরও অনেক খাদ্যগুণ যা আমদের প্রতিদিন দরকার। কিন্তু ফল খাবারও কিছু নিয়ম আছে যখন তখন ফল খাওয়া ভালো না। আবার কিছু কিছু ফল অতিরিক্ত খাওয়াও ভালো না। ফলের যেমন ভালো দিক আছে তেমনই কিছু কিছু ফলের কিছু খারাপ দিকও আছে। এরকমই একটি ফল হল আঙুর যা অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না। অতিরিক্ত আঙুর খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক আছে যেগুলি হয়তো আমরা তেমন ভাবে জানি না। আসুন জেনে নি কেন অতিরিক্ত আঙুর খাওয়া ভালো না।
অ্যালার্জি
অনেকেরই আঙুরে অ্যালার্জি হয়। আবার খেতেও হয় না, অনেকের আঙুরে হাত দিলেই অ্যালার্জি হয়। আঙুরের কিছু উপাদান অ্যালার্জির সমস্যা সৃষ্টি করে। অনেকের লাল লাল ফুসকুড়ির মত অ্যালার্জি হয়। আবার অনেকের অতিরিক্ত আঙুর খাবার ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যাও হয়। এছাড়াও হাঁচি হয়। এগুলি সবই আঙুরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এগুলি এক একজনের ওপর এক এক রকম। যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে আঙুর না খাওয়াই ভালো।
ওজন বৃদ্ধি
আঙুরে ক্যালোরি কম থাকে। এক কাপ আঙুরের রসে ১০০ গ্রাম ক্যালোরি থাকে যেটি বেশি না। কিন্তু আঙুর খুব ছোট ফল হবার ফলে আমরা একসঙ্গে অনেক আঙুর নিয়ে খাই। তার ফলে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়। যেটি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। যদি রোজ আঙুর খাওয়া হয় তাহলে অতিরিক্ত ক্যালোরি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রোজ খুব বেশি পরিমাণ আঙুর খেলে এই সমস্যা হতে পারে।
হজমের সমস্যা
আঙুর খেলে অনেকেরই বদহজম হয়। অতিরিক্ত আঙুর খেলে হজমের সমস্যা হয়। আবার এর ফলে ডায়রিয়ার সমস্যাও হতে পারে। পাকা আঙুর ও শুকনো আঙুর দুটিতেই হয়। আঙুরের একটি কমন সাইড এফেক্ট। যাদের ফ্রুকটোজ উপাদানে শরীরে সমস্যা হয় তাদের আঙুর না খাওয়াই ভালো। কারণ আঙুরে থাকা এই উপাদানটি শরীরে নানা সমস্যা, বিশেষত কিডনি ড্যামেজের মত সমস্যাও হতে পারে।
গ্যাস
এখন প্রচুর মানুষ গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন। এর একটি কারণ আঙুরও হতে পারে। এর কারণ আঙুরে থাকা ফ্রুকটোজ। ফ্রুকটোজ এই উপাদানটি সহজে হজম হয় না, আর পেটের ভেতরে গ্যাসের সৃষ্টি করে। এর কারণে গ্যাসের ব্যাথাও হয়। তাই যাদের গ্যাস অম্বলের সমস্যা আছে তাদের আঙুর না খাওয়াই ভালো।
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেড
আঙুরে অতিরিক্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেড থাকে। এই অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেড শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। কার্বোহাইড্রেড আমাদের প্রতিদিন দরকার। কিন্তু অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেড গ্লুকোজে পরিনত হয় এবং এই অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীরের জন্য ভালো না। এর ফলেই সুগারের মত সমস্যা হয়।
শরীরে কার্বোহাইড্রেডের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। বেঁচে থাকার জন্য সব উপাদানই দরকার কিন্তু সবটাই পরিমিত হওয়া উচিৎ।
কি ভাবছেন এবার থেকে আর আঙুর খাবেন না? না সেটা একদমই না। আঙুরের খারাপ দিকের সঙ্গে ভালো দিকও আছে। আঙুরে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে বিভিন্ন সমস্যা রোধ করার পাশাপাশি, শরীরকে ফিট রাখার জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান।
তাই খান কিন্তু পরিমাণ বুঝে। ওই যে কথায় বলে না অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভাল না। পরিমান বুঝে খেলে কোন ক্ষতি হবে না। বরং শরীরের ভালোই হবে। তাই ভয় না পেয়ে পরিমাণ বুঝে খান।
Comments
Post a Comment